টিপস এন্ড ট্রিকসলাইফস্টাইলস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

গোরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার সহজ উপায়!

চলে এসেছে কোরবানির ইদ। কোরবানির ইদ মানেই ত্যাগ ও মহিমা। ইদে আনন্দের পাশাপাশি গৃহস্থলিদের থাকে বিশেষ চাপ। কেন না, পশু কোরবানির সকল তোড়জোড়ের অধিকাংশই গৃহস্থলিদের ওপর থাকে। দেখা যায়, পশু কোরবানির পর সেই পশুর মাংস বাড়িতে আনার পর থেকে, মাংস কাটা, বন্টণ, রান্না ও অতিথী আপ্যায়ন; এই সবই লেগে থাকে। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে যে যার সাধ্য মতো পশু কিনলেও গোরুর ভুঁড়িই বাঙালি মুসলিমদের বেশি পছন্দ থাকে। সঠিক ভাবে পরিষ্কার ও রান্না করলে গোরুর ভুড়ির স্বাদ হয় অতুলনীয়, যা মাংসের স্বাদকেও হার মানায়। তাই দেখা যায় অনেকেরই মাংসের চেয়ে গোরুর ভুঁড়ি পছন্দ। কিন্তু, অনেকেই ভুড়ি পরিষ্কারের দীর্ঘ ঝামেলায় যেতে চান না। কেন না, ভুঁড়ি পরিষ্কার করা বেশ সময়সাপেক্ষ ও কষ্টকর। যেহেতু ভুঁড়িতে থাকে প্রচুর ব্যক্টেরিয়া তাই সঠিক উপায়ে এবং সঠিক ভাবে পরিষ্কার না করলে খাওয়াও যায় না। তাই চলুন আজকে জেনে নেবো- কোরবানির গোরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার সহজ উপায়! এই টিপসগুলো আপনারা কোরবানি ইদ ছাড়াও যেকোনো সময় ফলো করতে পারবেন!

গোরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার সহজ উপায়

ট্রেডিশনাল পদ্ধতি:

আমরা মেইন টিপসে যাওয়ার আগে জেনে নিই ট্রেডিশনাল পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতেও গোরুর ভুঁড়ি খুব সহজে পরিস্কার করা যায়। তো, এই পদ্ধতিতে ভুড়ি পরিষ্কার করতে প্রয়োজন পড়বে— চুন, হলুদ গুঁড়া, ধারালো ছুরি, বড়ো বালতি বা গামলা, বড়ো হাড়ি।

সর্বপ্রথম ধারালো ছুরির সাহায্যে ভুঁড়িটাকে দুইটি ভাগে ভাগ করে ভেতরে থাকা সকল ময়লা বের করে ফেলে দিতে হবে। এরপরে, একটি গরম পানির বালতিতে নিয়ে ভুঁড়িটা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এবার বেশ কিছু টুকরো করে নিতে হবে ভুঁড়িটাকে, তবে অবশ্যই বড়ো বড়ো করে।

এইবার একটি বালতিতে চুন নিয়ে তার মধ্যে পানি দিয়ে ভুঁড়ির টুকরোগুলো ৪০-৪৫ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে। আর এমন ভাবে চুবিয়ে/ভিজিয়ে রাখতে হবে যাতে ভুঁড়িগুলো চুনের পানিতে ডুবে যায়। ৪০-৪৫ মিনিট হলে চুবানো ভুঁড়িগুলোকে চুনের পানি হতে তুলে নিতে হবে।

#আরও পড়ুন: কোরবানির ইদে যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন!

এবার ছুরি বা চামচের সাহায্যে একটা একটা টুকরো নিয়ে বেছে নিতে হবে। চুনের পানিতে ডুবিয়ে রাখার ফলে খুব সহজেই ভুঁড়ির ওপরে থাকা কালো কালো অংশ ওঠে ভুঁড়ি ধবধবে সাদা হিয়ে যাবে। যদি দেখা যায়, সাদা হচ্ছে না বা করতে কষ্ট হচ্ছে, তবে আরও ২০-২৫ মিনিট চুবিয়ে রাখুন। আর হ্যাঁ, অবশ্যই কোমল গরম পানি দেবেন।

তারপর, বড়ো পাতিলে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে এবং এর মধ্যে হলুদ গুড়ো মিশিয়ে নিতে হবে। আর এই হলুদ মেশানো গরম পানিতে ভুঁড়িগুলোকে সেদ্ধ করতে হবে ১০-১৫ মিনিটের মতো। এর ফলে ভুঁড়ির গন্ধ চলে যাবে অনেকটা।

এইবার, সেদ্ধ হওয়া ভুড়ির টুকরোগুলো গরম গরম থাকতেই পুনরায় ছুরি বা চামচ দিয়ে চেঁছে নিয়ে হবে। এতে করে ভুঁড়ির সকল ময়লা খুব সহজে দূর হবে৷ এবার এই ভুঁড়িগুলোকে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন এবং খাওয়ার উপযোগী করে ছোটো ছোটো টুকরো করে নিন। চাইলে এই টুকরোগুলো ফ্রিজেও সংরক্ষণ করতে পারবেন।

গোরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করার আরও সহজ কিছু উপায়:

এক

যদি ওপরের ট্রেডিশনাল পদ্ধতি আপনার কঠিন লাগে, তবে ভুঁড়ি পরিষ্কারের সহজ একটি উপায় হলো ভিনেগারলবণ

এক্ষেত্রে ভুঁড়ির ভেতরের ময়লা ফেলে ভুঁড়িকে দুইভাগ করে নিন। এরপরে এই দুইভাগ ভিনেগার ও লবণ মিশ্রিত পানিতে ৪০-৫০ মিনিট চুবিয়ে রাখুন।।

৪০-৪৫ মিনিট পর দেখবেন, ভুঁড়ির ওপরে ও নিচে দুটি চামড়ার পরত আছে। এগুলো কোণা হতে হাতের সাহায্যে ওপরের দিকে আস্তে আস্তে টান দিলে পুরো পরত ওঠে যাবে। এরপরে পযাপ্ত পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। আর কিছু পতি লেবুর রসে ও হলুদের গরম পানিতে চুবিয়ে রাখতে পারেন। এতে ভুঁড়ির গন্ধ দূর হবে এবং ভেতরে থাকা সকল ময়লা বের হয়ে যাবে। পরে একটি চামচ দিয়ে চেঁচে নিতে পারেন। এরপর ধুইয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে রান্নার উপযোগী ভুঁড়ি। এই পদ্ধতি খুবই সহজ ও কার্যকরী।

#আরও পড়ুন: কোরবানির মাংস দ্রুত সেদ্ধ হওয়ার জাদুকরী টিপস!

দুই

এটা কোনো ঝামেলাবিহীন পদ্ধতি। এক্ষেতে প্রথমে একটি পাতিলে পানি ফুটিয়ে নিন। এইবার আস্ত ভুঁড়ির ময়লা ফেলানোর পর ভুঁড়িটাকে ছোটো ছোটো টুকরো করে কেটে নিন। এইবার প্রতিটা টুকরোকে সময় নিয়ে আলাদা আলাদা করে ঘষে নিন।

অন্যদিকে পানি ফুটলে একটা গামলা বা বালতিতে নিয়ে ভুঁড়ির কালো পাশটি পানিতে চুবিয়ে রাখুন। ১২-১৩ সেকেন্ডের মতো রাখবেন। তুলে চামচ দিয়ে ধরে আঁচড়ে নেন এবং ভুঁড়ি কিছুটা ঠান্ডা হলে হাত দিয়েই কালো পরতটা তুলে নিন। চাইলে চামচের পরিবর্তে স্টিলের গ্লাস ব্যবহার করতে পারেন।

কখনোই ১৩-১৭ সেকেন্ডের বেশি গরম পানিতে রাখা যাবে না, এতে উলটো ময়লা পরিষ্কারের পরিবর্তে ময়লা আটকে যাবে। যাই হোক, ভালো ভাবে পরিষ্কার করার পর ভালো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এভাবেই একটা একটা করে টুকরো পুনরায় পরিষ্কার করুন।

তিন

বরাবরের মতো প্রথমে ছুরি দিয়ে ভুঁড়ি কেটে টুকরা করে নিন। এরপর পানি গরম করে ভুঁড়িগুলো সিদ্ধ করে নিন। সেদ্ধ হলে চুলা হতে নামিয়ে গরম থাকা অবস্থায়তেই হাতে গ্লাভস পরে একটি চামচ দিয়ে ময়লা ঘষে ঘষে ওঠিয়ে ফেলুন।

প্রাথমিকভাবে সবগুলো ভুঁড়ি পরিষ্কার করা হলে; এইবার একটি বড়ো প্যানে কিছু পানি গরম করুন এবং এর সাথে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।

এইবার ভুঁড়ির টুকরা দিয়ে দিন। সেদ্ধ হওয়া অবধি অপেক্ষা করুন। ১৫-২০ মিনিট পর যখন তেল ও ময়লা ভেসে ওঠবে তখন পানি ঝড়িয়ে নিন। এইবার গরম অবস্থাতেই ভুঁড়িগুলো চেঁচে নিন। অবশেষে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।

#আরও পড়ুন: গোরুর মাংসের তিনটি সহজ ও মজাদার রেসিপি!

ভুঁড়ির উপকারিতা ও অপকারিতা:

গোরুর ভুঁড়িতে রয়েছে বিশেষ চারটি পুষ্টিকর উপাদান— জিঙ্ক, আয়রন, সেলেনিয়াম ও ক্যালসিয়াম। আর এগুলো প্রতিটিই আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। ১০০গ্রাম ভুঁড়িতে- ফ্যাট থাকে ৪ গ্রাম ও কোলেস্টেরল থাকে ১৫৭ মিলি গ্রাম। তো একজন হার্টের রোগী এই ভুঁড়ি নিশ্চিন্তে পরিমাণ মতো খেতে পারবেন। এছাড়াও ভুঁড়িতে দুই ধরনের ব্যাড / ক্ষতিকর ফ্যাট থাকে— স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্স ফ্যাট

অতএব, এই মজাদার ও সুস্বাদু ভুঁড়ি সুস্থ মানুষ খেতে চাইলে ৩০০ মিলি গ্রাম কোলেস্টেরল আসে এভাবে খেতে পারবে এবং হার্টের রোগীরা ২০০ মিলি গ্রাম কোলেস্টেরল আসে এমন ভাবে খাবে। এর অধিক খেলে তখন আবার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। এছাড়া যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে, তাদেরও ভুঁড়ি বুঝে শুনে খেতে হবে।


যাই হোক, এতক্ষণ আপনারা জানলেন কীভাবে খুব সহজে গোরুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করা যায়। তবে এই একই পদ্ধতি অবলম্বন করে খাসি, ভেড়া ও মহিষসহ খাদ্য উপযোগী সকল পশুর ভুঁড়ি পরিষ্কার করে নিতে পারবেন। আর এই লেখাটি আপনার ভালো লাগলে অন্যেদের শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের আরও নতুন নতুন টিপস পেতে অনুলিপির সাথেই থাকবেন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।