বই এবং বই পড়া!
বই একটি জীবন্ত বস্তু। কত সময় মরে যায়, কিন্তু বই কখনো মরে যায় না। আজীবন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে সুন্দর সুন্দর ধারণাকে সামনে রেখে তালিম করে যায়, কত আত্মগত চিন্তার বিকাশ সাধন করে যুগে যুগে তার হিসেব নেই। বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামের ভাষায় একটি ভালো বই অনন্ত যৌবনা। এই জীবন্ত বস্তুর শৃঙ্খলায় নিজেকে নিয়মিত বিস্তার করতে পারলে জীবন জীববৃত্তির বাইরে বুদ্ধিবৃত্তিতে যথাযথ অবস্থান নিতে পারে। মানুষকে বুঝতে হলে, জানতে হলে, জানাতে হলে বই পড়তে হয়। আত্মিক উন্নতি সাধনের পেছনে সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখে বই। কোনো জায়গার শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিন্তা-চেতনা, আচার-ব্যবহার বুঝার সবচেয়ে ভালো চর্চা করা যায়, সেই জায়গার বই পড়া কিংবা বইকে ধারণ করার মাধ্যমে।
কোথা থেকে আসলো বই?
Book হচ্ছে বই শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ। এই book শব্দটি এসেছে দক্ষিণ-পূর্ব স্কটল্যান্ড এবং মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে বসবাসরত জাতি কর্তৃক ব্যাবহৃত ইনিশিয়াল /প্রারম্ভিক ইংলিশ ভাষার ঐতিহাসিক রূপ boc থেকে যা beech শব্দটির সাথে প্রাসঙ্গিক / রিলেভেন্ট। একইভাবে স্লাভিক বা ইন্দো-ইউরোপীয়ান গোষ্ঠীর অন্তর্গত পূর্ব ইউরোপের জাতির ভাষা “bukva” এর সমজাতীয়। এই জায়গায় “bukva” প্রাথমিক পর্যায়ের বই নির্দেশ করে, যেখান থেকে কেউ কোনো ভাষার মৌলিক বিষয়াবলী রপ্ত করে। ইন্দো-ইয়োরোপীয় এই “bukva” শব্দটির উৎপত্তি অবশ্য বিচ বৃক্ষে খোদাই করা জায়গা থেকে বিবেচনা করা হয়েছে। একইভাবে ল্যাটিন শব্দ “codex” এর আধুনিক অর্থ “পুস্তক বা বই”। এই শব্দটিও বৃক্ষের বা কাঠের গুঁড়িকে বোঝায়। অর্থাৎ খুব চমৎকারভাবে বইয়ের ব্যুৎপত্তিগত বিষয় বৃক্ষের সাথে রিলেভ্যান্ট /প্রাসঙ্গিক। আর এই জায়গা থেকেই “book” শব্দটি আজ এই পর্যন্ত।
বই পড়া বিষয়ে মনীষীদের কিছু কথা:
মস্তিষ্ককে সুস্থ, সবল এবং কর্মচঞ্চল রাখতে বই পড়ার চেয়ে আর ভালো কিছু হতেই পারেনা। বই পড়লে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মস্তিষ্কে উত্তেজনা ও উদ্দীপনার সৃষ্টি হয় যা মানুষের মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। একজন পাঠক মারা যাওয়ার আগে বার বার বাঁচে। যে ব্যাক্তি কখনোই পড়েনা সে একবারই বেঁচে থাকে।
– জর্জ মার্টিন
নিজেকে একজন সুস্থ, সবল, সুন্দর এবং সবার থেকে একটু হলেও আলাদা মানুষ হিসেবে প্রকাশ করার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ রাস্তা নিঃসন্দেহে বই পড়া। একটি ভালো বই যদি কমপক্ষে একটি স্বকীয় বার্তা দিয়ে থাকে তাহলে এই প্রত্যেক একের সমষ্টি একজন ব্যাক্তিকে খুব স্বাভাবিকভাবেই সবার থেকে আলাদা করতে সাহায্য করে। যারা পড়াশোনা করে উপরে উঠতে চান, তাদের জন্য পড়া জরুরী।
– জিম রোহান
আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখ এবং আমরা!
আত্ম-উন্নয়নের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম বই পড়া। অনেক আত্ম- উন্নয়নমূলক বই আছে যেগুলো ব্যাক্তির জীবনে একটি শৃঙ্খলা এনে, জীবনকে পরিমাপ, পরিমিতিতে চালাতে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে। অনেক পাঞ্চুয়াল আর সফল মানুষের গল্প একজন সাধারণ মানুষকে নিয়মানুবর্তী করে আত্ম-উন্নয়নে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গত শতাব্দীর সেরা মানুষদের সাথে কনভারসেশন করার মতো বিষয় হচ্ছে বই পড়া।
– ডেসকার্টস
বই পড়া মানুষের স্মৃতিশক্তিকে শানিত করে। এটা কোনো একটি বইয়ের অভ্যন্তরীন গুণ বা শক্তি (Inner power)। যখন কেউ বই পড়ে সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর উক্তি, সংলাপ, চরিত্র, কাজ ইত্যাদির মুখোমুখি হতে হয় আর এই বিষয়টি একজন মানুষকে প্রভাবিত করে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে থাকে। ধীরে ধীরে এই বিষয়টি একজন মানুষের স্মৃতিশক্তিকে বাড়িয়ে তুলে। বই হলো অনন্যভাবে বহনযোগ্য জাদু।
– কিং স্টিফেন
চিন্তাশক্তির উন্নতির পেছনে বই পড়া খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অভিজ্ঞ লেখকদের দর্শন, চিন্তা, কথাবার্তা ইত্যাদি পড়ার মাধ্যমে মস্তিষ্ক বিভিন্ন বিষয়কে নতুনভাবে ভাবতে সাহায্য করে, ব্যাপকভাবে ভাবতে সাহায্য করে ফলে এনালাইটিক্যাল থিংকিং বৃদ্ধি পায়। মনের অবকাশ হচ্ছে বই পড়া।
– ডেভ ব্যারি
সৃজনশীলতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বই খুবই উপকারী ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেকটি বই শব্দ ভান্ডার বাড়ায়, নতুন ধারণার জন্ম দেয়, নতুন কিছু ভাবতে শেখায় মস্তিষ্ককে সৃষ্টিশীল করে তুলে। বলার আগে ভাবুন এবং ভাবার আগে পড়ুন।
– ফ্রান লেবোজিৎস
পরিশিষ্ট:
বই ম্যাজিক আর মোহের মতো। কেউ কেউ বইয়ের প্রেমে পড়ে হাস্যকরভাবে বইয়ের পাগল হয়ে যায় আর কেউ কেউ এই ম্যাজিক কাজে লাগিয়ে জীবনের সর্বোচ্চ সফলতা অর্জন করে ফেলে। আসলে বই মানুষের স্পর্শের এমন একটা জায়গায় মিশে থাকে যেখানে একজন মানুষ সত্যি অর্থে বেঁচে থাকে। নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন।
লেখক:
তানজীভ সারোয়ার