
হোটেলের নাম ভালো কাজের হোটেল দেখে চমকে উঠবে না এমন কেউ বোধহয় নেই! এমন অদ্ভুত নামের হোটেলের কথা কে শুনেছে? তবে শুনতে অদ্ভুত হলেও এমন হোটেলের দেখা মিলবে খোদ রাজধানীতেই!
ভালো কাজের হোটেল মূলত আর পাঁচটা সাধারণ হোটেলের মতো নয়। এখানে কিনে খেতে হয় না কোনো খাবার। এখানে খাবার খেতে চাইলে কেবল একটি শর্ত পূরণ করতে পারলেই হলো! শর্তটাও বেশ সাদামাটা, করতে হবে ভালো কাজ। ব্যস, এইটুকুই!
রাজধানীর গুলশান, কমলাপুর, তেজগাঁও এলাকায় এমন দৃশ্যই চোখে পড়বে হরহামেশা। কয়েকজন ব্যতিক্রমী চিন্তার যুবক গড়ে তুলেছেন এই অদ্ভুতুড়ে হোটেলটি। শুধু ভালো কাজের বিনিময়েই নয়, দু’টি ভালো কাজ করবেন এমন প্রতিজ্ঞা করেও এই হোটেলে খেয়ে যেতে পারবেন যে কেউ। রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষদের মধ্যে পুষ্টিকর খাবার বিতরণের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এরইমধ্যে বেশ প্রশংসাও কুড়িয়েছে। মূলত ভালো কাজকে উৎসাহিত করতেই শুরু হয়েছিল তাদের এই উদ্যোগ। শনি থেকে বৃহস্পতিবার অসহায় মানুষের মাঝে খাবার বিতরণ ও শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদ ও এতিমখানায় খাবারের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। প্রতিদিন প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষ তৃপ্তি করে খান এসব খাবার।
আরও পড়ুন# বাংলাদেশে জ্বালানি তেল রপ্তানি করতে রাজি ভারত!
কেউ কলার খোসা সরিয়ে, কেউ বা পাখিকে খাবার খাইয়ে কেউ বা অন্যকে সাহায্য করে খেয়ে যাচ্ছেন তাদের এই ব্যতিক্রমী হোটেলে।
ঘটনার শুরু ২০০৯ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েকজন তরুণ স্বপ্ন বুনলেন ব্যতিক্রমী কিছু করবেন। তারা চাইলেন অসহায়দের সাহায্য করতে, কিন্তু সে মাধ্যম হতে হবে অনন্য! সেই ভাবনা থেকেই শুরু ভালো কাজের হোটেলের।
ভালো কাজের হোটেলের প্রধান স্বেচ্ছাসেবী মো. আরিফুর রহমান জানান, জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের নাটক দেখে তারা এমন হোটেল খোলার আইডিয়া পেয়েছেন। খাবার বিতরণের নির্দিষ্ট স্থান না থাকলেও এখন বেশ জোরেশোরেই চলছে ভালো কাজের হোটেল ও তার কার্যক্রম। শত প্রতিকূলতার বাঁধা সামলে তারা ঠিকঠাক লক্ষ্যের পথেই অবিচল রয়েছেন।
এখন হোটেলটি পরিচালনার জন্যে বাসাবো এলাকায় রয়েছে একটি রান্নাঘর। আছে নিজস্ব বাবুর্চিও।
আরও পড়ুন# নতুন বাড়িতে যাওয়ার পথেই লা’শ হলেন কৃষক!
এই হোটেলের খরচ তোলা হয় ডেইলি টেন পদ্ধতিতে! এই হোটেল পরিচালনা করেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। এদের সবাই প্রতিদিন দশ টাকা করে বাধ্যতামূলক চাদা দিয়ে থাকেন। তবে এ টাকায় পর্যাপ্ত খাবারের আয়োজন করা সম্ভব হয় না বলেই জানান আরিফুর রহমান। এরজন্যে তিনি দায়ী করেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে! তিনি আরও বলেন, আগে যে টাকায় এক মাসের খাবারের ব্যবস্থা হতো, এখন তা বিশ থেকে বাইশ দিনে গিয়ে ঠেকেছে!
তবে এখানেও থেমে থাকেনি ভালো কাজের হোটেল! রাজধানীর গণ্ডি ছাড়িয়ে রাজধানীর বাইরেও পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এর কার্যক্রম। এ কাজে সহায়তা করছেন স্থানীয় কিছু স্বেচ্ছাসেবক। সুযোগ থাকলে সারা বাংলাদেশেই এমন হোটেল ছড়িয়ে দেওয়া হবে, এমন প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ভালো কাজের হোটেল পরিচালনাকারী ব্যক্তিবর্গ! তবে আপাতত চট্টগ্রামে সপ্তাহে একদিন করেই চলছে ভালো কাজের হোটেলের ঢাকার বাইরের কার্যক্রম।