নাইট শিফটে ডিউটি হলে যেভাবে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবেন!
আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষদের প্রায় ৫০% মানুষই কাজ করে নাইট শিফটে। নাইট শিফটে কাজ মানেই প্রতিদিন শারিরীক ও মানসিক সমস্যার মুখোমুখি। কারণ স্বভাবই মানুষ রাতে আরাম করে বা ঘুমায়। তো দীর্ঘদিনের অভ্যাস পরিবর্তন ঘটাতে গেলে তখন তো সমস্যা দেখা দেবেই। আর অনেকদিন ধরে এমন নাইট শিফটে ডিউটি বা কাজ করলে এটা শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধির ও সৃষ্টি করে। আর এই সমস্যাকে মেডিক্যাল টার্মে বলে শিফট ওয়ার্জ স্লিপ ডিসঅর্ডার। তাই এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া। আজকে আমরা জানবো—নাইট শিফটে ডিউটি হলে যেভাবে মানসিক ও শারিরীকভাবে সুস্থ থাকবেন।
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডার এর লক্ষণ—কাজে যথেষ্ট মনোযোগী না হওয়া, ইরিটেশন,অল্পতেই রেগে যাওয়া,ঘুমের অভাব বা অল্প ঘুম হওয়া, চুল পড়া,মাথা ব্যথা বা মাথা ঘোরা, ইত্যাদি। জীবিকার তাগিদে অনেককেই রাত জেগে কাজ করতে হয়, এটা সাধারণত একটা বিষয়। কারণ বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের ও অফিসের কাজগুলো সারা দিন রাতই চালু রাখতে হয়। যেমন—কল সেন্টার, টেলিকম, জরুরি সেব, ই-কমার্স কোম্পানি,ইত্যাদি। আবার অনেকে রাত জেগে ফ্রিলান্সিং এর কাজ করেন, আবার কেউ পড়াশুনাও করেন। অনেকের এই নাইট শিফটে কাজ করা খুব একটা পর্যন্ত না, কিন্তু বাধ্য হয়ে করতে হয়। কিন্তু, এর ব্যতিক্রম অনেকেই আছেন,যারা রাতে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। আসলে মন থেকে মেনে নিলে রাত দিন কোনোটাতেই খুব একটা সমস্যা হয় না।
নাইট শিফটে ডিউটি থাকলে আপনার করণীয়: আপনার নাইটে শিফটে ডিউটি আছে, কিন্তু আপনি এই বিষয়টাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না। যা পরবর্তীতে আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কেননা, নাইট শিফটে ডিউটি মানে আপনি প্রকৃতির উল্টো দিকে হাঁটছেন, এইজন্য আপনাকে বেশ কিছু জিনিস ভারসাম্য রেখে চলতে হবে। যে টিপসগুলো আপনি মেনে চলতে পারেন—
১) ঘুমের রুটিন নির্ধারণ করুন:
যারা নাইট ডিউটি করে তারা সাধারণত প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর সুযোগ পায়, এক্ষেত্রে আপনার নাইট ডিউটি থাকলে চেষ্টা করুন দিনের একটা সময় ঘুমানোর। এছাড়াও আপনার ঘুমানোর ঘরটি যেন অন্ধকারচ্ছন্ন, নিরিবিলি এবং ঠাণ্ডা হয় সে দিকেও নজর রাখবেন। আর ঘুমানোর জন্য ৬-৮ ঘণ্টা নির্ধারিত করে রাখুন৷ দিনের সময় ঠিকমতো না ঘুমালে তা আপনার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাবে। এছাড়া ছুটির দিনগুলোতে রিল্যাক্স থাকুন, ট্যুর দিন বা আপনার যা ভালো লাগে তাই করুন।
২) স্ক্যাল্প বা চুল ম্যাসাজ করুন:
শিফট ওয়ার্ক স্লিপ ডিসঅর্ডারের অন্যতম একটি লক্ষণ হলো চুল পড়া। এইজন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন হট ওয়েল ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চুলের গোড়ার রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুল পড়া রোধ করবে। এছাড়াও কীভাবে চুল পড়া কমাবেন তার একটি পূর্ন আর্টিকেল আছে আমাদের এটা ফলো করতে পারেন। এই হট অয়েল চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি আপনার মানসিক প্রশান্তিও ঘটাবে, ভালো ঘুম হবে।
৩) স্ট্রেস নেবেন না:
স্ট্রেস বেশি নিলে কাজ সঠিক ভাবে সম্পূর্ণ করা যায় না। তাই খুব বেশি কাজের প্রেসার থাকলেও আস্তে আস্তে স্থির হয়ে টাস্কগুলো শেষ করুন। আর কাজ শেষে একবার চোখ বুলিয়ে নিন যে আপনি যে কাজ করেছেন সব ঠিক আছে কিনা। এছাড়াও মানসিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য ব্যায়াম ও মেডিটেশন করুন। কাজ শেষে শাওয়ার নেওয়ার পূর্বে এই ইয়োগাগুলো করতে পারেন, যেমন-বজ্রাসন বা প্রাণায়াম। এগুলো আপনাকে স্ট্রেস হতে মুক্ত রাখবে, সেই সাথে কাজে মনোযোগী করে তুলবে।
৪) ডিনার করুন সময়মতো:
আমাদের স্বাভাবিক নিয়মে রাতের খাবার খেয়েই দিনটির সমাপ্তি ঘটাই এবং ঘুমাতে যাই। কিন্তু, যারা রাতে কাজ বা ডিউটি করে তাদের জন্য ডে সাইকেল শুরু হয় মূলত ডিনার দিয়ে। এইজন্য সন্ধ্যা থেকে শিফট শুরু হলে যথা সময়ে ডিনার করে নিন, গভীর রাতে বা মধ্যরাতে ডিনার করা যাবে না৷ চেষ্টা করুন খাবার খেয়ে কাজ শুরু করার এবং ৭/৮ টার মধ্যেই ডিনার সেরে নিন। আবার, দেখা যায় অনেকে ভাবে ভারী খাবার খেলে ঘুম আসবে, তাহ ভারী খাবার খায় না। এমন করা যাবে না। কারণ শরীর পর্যাপ্ত ক্যালরি না পেলে তখন মানসিক ও শারীরিক ভাবে কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যাবে।
আরো পড়ুন: গরমে রোগ-বালাই এড়াতে যা করণীয়
৫) কাজের ফাঁকে হালকা নাস্তা করুন:
রাতে কাজ করতে গেলেই অনেকে প্রচুর চা কফি পান করে থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দীর্ঘ সময় কাজে থাকলে ক্ষুধা লাগাটা স্বাভাবিক। তবে ক্ষুধা লাগলে বাদাম, সল্টেজ বিস্কিট, ব্রেড, ছোলা জাতীয় খাবার খান। আর যাদের কল সেন্টারের মতো জবগুলোও এক নাগাড়ে কথা বলতে হয়, তারা চিনি ছাড়া ফ্রেশ জুস খেতে পারেন কিংবা সর্বোচ্চ এক কাপ চিনি ছাড়া আদা চা। আর অবশ্যই তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলবেন। কারণ এসব খাবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ঘটায়।
৬) কাজের ফাঁকে বিরতি নিন:
অনবরত কাজ করতে থাকলে তা শরীর ও মনে নেগেটিভ প্রভাব ফেলে। তাই চেষ্টা করুন ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিয়ে কাজ করতে। আর এই সময়টা চাইলে কলিগদের সাথে আড্ডা দিন, অথবা বই পড়ুন কিংবা একটু হেঁটে নিন। এছাড়াও চাইলে সফট টোনের গান শুনুন। আর যদি আপনার অনলাইন ভিত্তিক কাজ হয় তো কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেস্ট নিন অথবা কোনো ফানি ভিডিও দেখে কিছুক্ষণ হাসুন।
সর্বশেষ একটি পরামর্শ তা হলো, কাজকে বিনোদন হিসাবে নিন এবং আনন্দের সাথে করুন। তাতে করে আপনার কাজ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে। কেননা, কাজকে মানসিকভাবে চাপ হিসাবে না নিলে তখন শারীরিকভাবে তা খুব সহজে করে ফেলা যায়। এছাড়াও চেষ্টা করুন ঘুমের রুটিন ও হেলদি ডায়েট মেনে চলতে। মনে রাখবেন, আপনি মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে আপনার শরীরও অনেকটাই সুস্থ থাকবে। প্রিয়পাঠক, জেনে নিলেন— নাইট শিফটে কাজ করলে যেভাবে নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ বা ফিট রাখা যায়। আর এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরণের আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন। আজ এই পর্যন্ত, ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।