আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদী, বাস্তবে নয়!
আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদী, বাস্তবে নয়! এটার বাস্তব প্রমাণ চারপাশে চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পাবেন!
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার কথা মনে আছে? হয়ত আছে আর হয়তো নেই। আমরা একটা ঘটনা ঘটলে ফেসবুকে খুব আন্দোলন দেখাই। আর কিছুদিন পর আমাদের সেই আন্দোলন একেবারে চুপসে যায়। তাদের একমাত্র ছেলেটা আজও বিচারের আশায় প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকে। সাগর-রুনি হত্যার আজ প্রায় ৪ বছর হয়ে গেছে, আজও তাদের হত্যার বিচার হয়নি। আমরা সবাই ভুলে গেছি,আমরা সবাই ভুলে যাই!এটাই আমাদের স্বভাব।
আরও পড়ুন: লক করা ফোন থেকে ব্যাক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করুন
কুমিল্লার তনু হত্যা ও ধর্ষণের সময়েও আমরা বেশ কিছুদিন অনলাইনে অফলাইনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিক্ষোভ কিন্তু খুব অল্প দিনেই হাওয়া তে মিলিয়ে গেছে। আগামী মার্চে তনু হত্যার পাঁচ বছর পূর্তি হবে আজ। এই হত্যা মামলার আজও কোন সরহার হয়নি। হয়নি তার হত্যা এবং ধর্ষণের বিচার। আমরা সবাই ভুলে গেছি,আমরা সবাই ভুলে যাই। এটাই আমাদের স্বভাব। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ রবিবার সকাল ৯ টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে ২৫ বছর বয়সি হিন্দু যুবক পেশায় দরজি বিশ্বজিত দাস জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হেঁটে পার হওয়ার সময় আন্দোলনকারীরা তাকে এলোপাতাড়ি কোপায় এবং আঘাত করা শুরু করে। সরকারদলীয় সংগঠনের কর্মীরা বিশ্বজিৎ দাসকে বিনা কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষ এবং রক্ষা বাহিনীর সদস্য এবং সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এ বিশ্বজিত দাশের হত্যা নিয়েও আমরা অনলাইনে অফলাইনে ব্যাপক আন্দোলন করেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন আগে শোনা গেল তার হত্যা মামলায় আটক হয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। হয়নি বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার।
আমরা সবাই ভুলে গেছি, আমরা সবাই ভুলে যায় এটাই আমাদের স্বভাব। ২০২০ সাল ৩১ জুলাই পুলিশের হাতে নিহত হলেন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। আর আমরা শুনলাম সেই পুরনো গল্প সেই গল্প চলছে ত চলছেই।২১ জুলাই রাত এক চেকপোষ্টে তার গাড়ি থামাল তারা যখন গাড়ি তল্লাশি করছিল বাধা দিয়েছিল সিনহা আর সে বাধা দেওয়ার কারণে পুলিশ গুলি চালাতে বাধ্য হলেন,আত্মরক্ষার্থে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি করেন আর মারা গেলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা। কিন্তু এটা যে একটা সস্তা গল্প সেটা আমরা সকলেই জানি। রাতারাতি উত্তাল হয়ে গেল অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া। সবাই নিহত মেজর সিনহার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে তুমুল আন্দোলন করবে। এই ভাবে বেশি না সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতেই আন্দোলনের বাতাসে একেবারেই ফুস করে বেরিয়ে গেল। কেউ আর মাথা ঘামাল না। সিনহা হত্যায় জড়িত আসামিদের বিচার হলো কি হলো না বা জেলে গেল কি গেল না সেদিকে আমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। সুবিচার হবে কি হবে না তাও আমরা জানি না আমরা সবাই ভুলে গিয়েছি আমরা সবাই ভুলে যাই। এটাই আমাকে স্বভাব, আসলে আমরা এমনি।কোনো কিছু নিয়ে প্রথম কয়েকদিন আমাদের রক্ত খুব গরম থাকে। আমরা যে সবাই সুনাগরিক নামি দামি সব পোস্ট লিখি তা আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে জাহির করি। আসলে মোল্লার দৌড় যেমন মসজিদ পর্যন্ত আমাদেরও দৌড় সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত।
আমারা যখন এই বেড়াজাল থেকে বের হতে পারব, সঠিকভাবে প্রতিবাদ করতে শিখব, আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদী, বাস্তবে নয়- এই উক্তিকে ভুল প্রমাণিত করত পারব; কেবলমাত্র তখনই দেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব হবে!