
সুবহে সাদিকের পর পরই চট্টলাগামী নাইট কোচটা আমাদের নামিয়ে দিলো মিরসরাই বাজারে। হাতে গোনা অল্প ক’জন মানুষ সেখানে ইতিউতি ঘুরছে। আমাদের গন্তব্য হলো, নাপিত্তাছড়া ট্রেইল।
শুক্রবারের ভোর, প্রচুর টুরিস্ট থাকার কথা। কেন যে নেই! অবাক লাগলো।
কালচে নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, একফালি চাঁদ আশেপাশে ক’খানা তারা বন্ধুদের নিয়ে আবছা আলো পাঠাচ্ছে তার পৃথিবীকে। স্বপ্নময় পরিবেশ।
আমরা যাব নরদুয়ার বাজারে। বাসের কন্ডাক্টরকে না বলে রাখায়, সে আমাদের নামিয়ে দিয়েছিল মিরসরাইয়ে। কী আর করা! দুটো সিএনজি রিজার্ভ করে রওনা হলাম নাপিত্তাছড়ার পথে।
তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে সূর্য কেবল কমলাভ রাঙা আবিররঙা আলো ছড়াতে শুরু করেছে। কমলাভ লাল, আর দূর পাহাড়ের নীলচে রং মিলে কেমন বেগুনী রঙা একটা পরিবেশ তৈরি করেছে। এমনিতেই ভোরের এই সময়টুকু আমার খুব পছন্দ। চেনা পরিবেশের বাইরের একটা আবহ মনে অন্যরকম একটা ভালো লাগা তৈরি করেছে। ছুটন্ত সিএনজির সাথে সাথে যেন ছুটে চলেছে আমার মনও।
নরদুয়ারী বাজারে দেখতে পেলাম বেশ কয়েকজন ছেলেকে। বুঝলাম, আমরা ভুল জায়গাতে নেমেছি বলেই, তখন কোনো টুরিস্ট দেখতে পাইনি।
আমাদের সিএনজি এগিয়ে গেল আরও কিছুটা। এরপরের রাস্তাটুকুতে এত কাদা যে সিএনজি যাওয়ার কোনো উপায় নেই। নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। আর এখানেই পেয়ে গেলাম আমাদের পিচ্চি গাইডকে। ওর নাম নবীন।
দেখে মনে হয় ৯-১০ বছরের এক বালক। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, যত ছোটো দেখাচ্ছে, তত ছোটো নয়। সে ক্লাস সেভেনে পড়ে।
হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম রেললাইনের কাছে। এই এলাকায় পুঁইশাক, বরবটি, কাঁকরোল এইসব সবজি ভালো হয়। রাস্তার দুই ধারে ওসব সবজির ক্ষেত।
রেললাইনের কাছেই কিছু ছাপড়া টাইপ হোটেল আছে। হোটেলে সকালে ও দুপুরে খেতে হলে অর্ডার করে দিতে হয়, আগে থেকেই। এইসব হোটেলে ব্যাগ রাখার ব্যবস্থাও আছে। এখানে খাবার খেলে এদের বাড়িতে ওয়াশরুম ব্যবহার করার সুযোগও পাওয়া যায়। যেহেতু গ্রাম, নাপিত্তাছড়া এলাকায় কোথাও কোনো পাব্লিক টয়লেট কিন্তু নেই। তাই ফ্রেশ হবার জন্য এদের টয়লেটের ওপরই ভরসা করতে হয়। তবে হাতমুখ ধোবার জন্য সামনেই একটা টিউবওয়েল আছে।
আমরা নাস্তার অর্ডার করে ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। রেললাইন ধরে বেশ খানিকটা দূরেই দোকানিদের বসতবাড়ি। আমাদের গাইড নবীন সেখানে নিয়ে যাচ্ছে। রেললাইনে দাঁড়িয়ে আছি। গ্রামের রেললাইন কিন্তু শহুরে রেললাইনের মতো নোংরা হয় না। দুই ধারে গাঢ় সবুজ গাছপালা থাকে বলে দেখতে ভালো লাগে। সেই রেললাইনের গাছপালার মাথার উপর দিয়ে সূর্য উঠছে। তারই মধ্যে একখানা ট্রেন চলে গেল হুইশেল বাজিয়ে। সকালটা এত ভালো লাগছে যে, মনে হচ্ছিল সারাটা দিন খুব ভালো কাটবে।

প্রাতঃকৃত সেরে ছাপড়া দোকানে ফিরে এসে দেখি, এতটুকু সময়েই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে! ভাগ্যিস! যাওয়ার সময়েই নাস্তা অর্ডার করে গিয়েছিলাম! এখন এমনকি ঠিকমতো সবাই বসার জায়গাটুকুও নেই। কোনোক্রমে নাস্তা করে, দুপুরের খাবারের জন্য অর্ডার করে বেরিয়ে পড়লাম।
এখানে বলে রাখি, যেকোনো ঝিরিপথ বা ঝর্ণার ট্রেইলে হয় গ্রিপওয়ালা জুতো লাগবে, নয়তো পায়ে এংকলেট পরে নিতে হবে। আমাদের মধ্যে যারা নাপিত্তাছড়া যাবার জন্য দুটোর কোনোটিই আনেনি, তারা এখানকার দোকান থেকেই এংকলেট ভাড়া নিলো। ব্যবহৃত এংকলেট ভাড়া দেয় এরা। তবে আমার পরামর্শ থাকবে, এংকলেট সাথে করে নিয়ে আসার।
বাঁশের লাঠি কিনে রওনা হয়ে গেলাম। রেললাইন পেরিয়ে যাওয়ার পর অনেকখানি পায়ে হাঁটা পথ। যেতে যেতে প্রচুর সবজি ক্ষেত দেখলাম। কৃষকেরা পরিপক্ক সবজি তুলে নিয়ে যাচ্ছে, বাজারে বিক্রির জন্য।
এক জায়গায় ডাব বিক্রি করতে দেখে সবাই মিলে ডাবের পানিও খাওয়া হলো গল্প আর আড্ডায়। নাপিত্তাছড়া পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছি, প্রচুর এনার্জি তো দরকার!
আরও পড়ুন: হুমায়ূন আহমেদ : বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র
গন্তব্য নাপিত্তাছড়া
নাপিত্তাছড়া যাওয়ার জন্য এখন টিকিট কাটতে হয়। ২০ টাকা করে টিকিট কেটে নেমে গেলাম মাঠে। মাঠ পেরিয়েই ঝিরিপথ শুরু। গাছগাছালির আড়ালে কঠিন পাথর স্তরের উপর দিয়ে হু হু করে বয়ে চলেছে শীতল জলপ্রবাহ। কেমন একটা শান্তি শান্তি পরিবেশ।
এই সহজ ঝিরি পেরিয়ে, খানিক পরই শুরু হয় বড় বড় পাথর আর শৈলস্তরের বাঁধা ডিঙানোর পালা। শুক্রবার হওয়ায় নেহায়েত এই ভোর সকালেই অনেক মানুষ জমে গেছে। রীতিমতো লাইন ধরে কঠিন রাস্তাগুলো পেরুতে হচ্ছে।

এখানে একটা ব্যাপার দেখে খুবই ভালো লাগলো, এক পঞ্চাশোর্ধ মধ্যবয়সী ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে নিয়ে চলে এসেছেন নাপিত্তাছড়া ট্রেকিং এ। আরেক ভদ্রলোক তো স্ত্রী, দুই মেয়ে সহ পুরো পরিবারই চলে এসেছেন। বাংলাদেশে বর্তমানকালের মধ্যবয়সী জেনারেশন যে এখন ট্র্যাকিঙয়ে নিজের পরিবারকে নিয়ে আসার গাটস দেখাতে পারছেন, এই ব্যাপারটা চোখের সামনে দেখে ভালো লাগলো। মানসিকতা যে উন্নত হচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখছে না।
মোটামুটিভাবে পেরিয়ে গেলাম কঠিন অংশটুকু। আরও কিছুক্ষণ চলার পর পাওয়া গেল নাপিত্তাছড়া র প্রথম ঝরনাটা। এটাকে বলা হয় টিপরা খুম। এখানে মূলত একটা ক্যাসকেড। ওটা বেয়েই সবেগে নেমে পড়ছে পানির ধারা। নিচে জমা হওয়া পানিতে নামতে একটুও দ্বিধা করলাম না। বন্ধু জুলহাস তরতর করে চলে গেল ক্যাসকেডের ঠিক নিচে। একটু ঢালু ক্যাসকেড হওয়ায় ওতে চেপে বসা যায়। ও বসে পড়লো সেখানে। ওর পিঠে আছড়ে পড়া ঝর্ণা ধারা দেখে আমারো লোভ হলো। সাঁতরে পানি কেটে চলে গেলাম ওখানে। কিছু তীব্র পানির তোড়ে কিছুতেই বসে থাকতে পারলাম না।
যাই হোক, কিছুক্ষণ দাপাদাপি করে, পাশের পাহাড় বেয়ে চলে গেলাম উপরের কুপিকাটা খুমে। ভেজা শরীরে পাহাড়ি পথ গেল পিচ্ছিল হয়ে। আমার মতো আরও অনেকেই এভাবে উঠে আসায় কাদা কাদা হয়ে গেছে পাহাড়গাত্র। কষ্টে সৃষ্টে উঠে কুপিকাটা খুমের কাছে চলে গেলাম। এখানেও জুলহাস নেমে গেছে গভীর এই খুমটায়। জুলহাসের সাথে পলাশও। নাপিত্তাছড়ায় ঘুরতে আসা অন্য আরও অনেক মানুষের মধ্যে আর কেবল একজন আছে খুমে।
আমাকে আটকে রাখে কার সাধ্য? আমি ভরা বর্ষায় বগালেক অর্ধেকটা সাঁতরে পেরিয়েছি। দেবতাখুমে যেখান থেকে মানুষ ফিরে আসে, তার পরের আরও দুইটা জলাশয় সাঁতরে গিয়েছিলাম, দেবতাখুমের উৎপত্তিস্থল দেখার জন্য। এইটুকু খুম আমি পাড়ি দিতে পারব না? পায়ের এংকলেট নিয়ে নেমে পড়লাম। খানিক সাঁতরানোর পর আমার বাম পায়ে অদ্ভুত একটা ব্যথা অনুভব করলাম। এমন ব্যথা আগে আর কখনো হয়নি। মনে হচ্ছে পা টা নিচের দিকে চলে যাচ্ছে কোনো এক টানে। একটু ভয় পেলেও, আতঙ্কিত হলাম না। আস্তে আস্তে এক পায়ে সাঁতরে চলে গেলাম ঝর্ণাটার ঠিক নিচে। ওখানে বসার মতো জায়গা আছে।

ভাবছি, ফিরতে পারব তো? এখানে বসে মনে হলো, অপরিচিত জায়গায় গিয়ে হয়তো এমন পাগলামি করা ঠিক না। কখন কী হয়ে যায়, ওপরওয়ালা ছাড়া আর কেউ কি বলতে পারে?
জুলহাসকে বললাম ব্যাপারটা। ও বলল, ভয় পাইস না। এখানে ডুব না দিলেই হলো। খুমটা অনেক গভীর, কোনো তল পাবি না। যেতে পারবি?
আমি বললাম, ইনশাআল্লাহ পারব। আল্লাহর নাম নিয়ে নেমে পড়লাম। সহি সালামতে উঠেও গেলাম। পরে দেখি, আমাদের পিচ্চি গাইড নবীনকে অন্য দলের একজন পূর্নবয়স্ক গাইড বকাঝকা করছে। কেন আমাদের নামতে বারণ করেনি; সেইজন্য। আমাদের দলের যারা পাড়ে বসে ছিল, তারা বলল, ও বারণ করেছে। আমরা যারা নেমেছি খুমে, তারাই টের পাইনি।
নাপিত্তাছড়া এর এই খুমে নাকি দুইজন মারা গেছে। খুমের নিচটা পাতাল নদীর মতো করে কোথায় যেন মিশেছে। তাই ডুব দিলে একটা টান অনুভব করা যায়। আমি বুঝলাম, এই টানের জন্যই আমার পা কথা শুনছিল না। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন, সেজন্য তাঁর কাছে শুকরিয়া।
কুপিকাটা খুমের ডান পাশ দিয়ে পাহাড়ে উঠতে হবে। এই ট্রেইলটাও একটু কঠিন। এটা পেরুলেই একটা ঝিরি পাওয়া যাবে।
নাপিত্তাছড়া: মূল ঝর্ণায়
কঠিন শৈলস্তর। তার উপর দিয়ে কুল কুল করে বয়ে চলেছে জলধারা। একইসাথে কঠিন আর কোমলের বসবাস। এই জায়গাটা অদ্ভুত সুন্দর। চার পাশের ঘন গাছের জঙ্গলের আড়াল থেকে চোখে পড়ে এক টুকরো আকাশ। অদ্ভুত একটা শান্তির জায়গা। পাথুরে শৈলস্তর ধরে খানিক এগিয়ে গেলে সামনে দুটো পথ পাওয়া যাবে। একটা চলে গেছে হাতের বামে। এই ঝিরির শেষ মাথায় বাঘবিয়ানি ঝর্ণা। অন্যটি সোজা বান্দরখুম ঝর্নার দিকে।
আমরা বান্দরখুমের দিকেই এগিয়ে গেলাম। এই বান্দরখুমই সবচেয়ে সুন্দর। এটিকেই মূলত নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা বলে। বান্দরখুম গিয়ে দেখি, আমাদের আগেই অনেক মানুষ এসে ঝর্ণার পাদদেশ দখল করে রেখেছে। এত মানুষের ভীড়ে ওখানে আর যেতে ইচ্ছে করলো না। খানিক দূরের পাথরে সবাই বসে সেখান থেকেই ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখে যাচ্ছি।

ওদিকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় দাঁড়িয়ে এত মানুষজন ছবি তুলছে, টিকটক ভিডিও করছে, তার মধ্যে দুজন অতি সাহসিকতা দেখাতে গিয়ে আছাড় খেয়ে পড়লো! অবস্থা দেখে হাসবো না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
আমাদের আর বাঘবিয়ানি ঝর্ণায় যাওয়ার ইচ্ছে হয়নি। ফিরতি পথ ধরলাম। ফিরতে ফিরতে আমি আমাদের গাইডের সাথে কথা বলে এখানকার হালচাল শুনে নিলাম।
এই এলাকায় নাকি একটা চক্র আছে, যারা চুরি করে জঙ্গলের গাছ কেটে নেয়। এই চক্রটি এতোই শক্তিশালি, ফরেস্ট গার্ডদেরও তোয়াক্কা করে না। এমনকি, তাদের গাছ চুরি করার কাজে বাঁধা দিলে উল্টা ফরেস্ট গার্ডদেরও আহত করে পালিয়ে যায়।
তবে মাঝেসাঝে যে এই গাছ চোরেরা ধরা খায় না, তা নয়। নবীনের মামাই নাকি এই কাজে যুক্ত ছিলো। নির্বিকার মুখেই এই কাহিনি বলে গেল সে। কয়েক বছর আরামসে গাছ চুরির কাজ করে গেছে। তার পরে ধরা পড়ে এত মামলা খেয়েছে যে আয়ের চেয়ে ব্যয়ই হয়েছে বেশি। আমি বুঝলাম না, ফরেস্ট গার্ডেরা এসব দস্যু কেন সামলাতে পারবে না। এর পিছনের যুক্তিটা কী?
নাপিত্তাছড়া থেকে ফেরা
নাপিত্তাছড়ার পুরো ট্রেইলটায়, একটা পাহাড়ে চড়তে হয়। তারপর আবার নামতে হয় বান্দরখুম যাওয়ার জন্য। উঠার সময় পাহাড়টার শেষ দিকের খাড়া পথ উঠতে খুবই কষ্ট হয়েছিল। তখন সাকিব বার বার বলছিল, কীভাবে নামবো আমরা এই রাস্তায়? খুব কঠিন আর বিপদজনক হবে। আমাদের পিচকি গাইড এই সব কথা শুনে কোনো মন্তব্যই করেনি। আমরা তখন ভেবেছি, যা হবার হবে! দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা!
ফেরার সময় সেই পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার পর এবাই গাইড চললো অন্য পথে! নামার নাকি আলাদা রাস্তা আছে, যা সহজ! কিন্তু এই পথে আর কুপিকাটা খুম বা কোনো ঝিরি পথ পাওয়া যাবে না। কেবল পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে যাওয়া। নামতে গিয়ে রোদের তাপে ভালোই ভুগতে হলো। তবে নিরাপদ পথ।

ঝর্ণায় যাবার সবচেয়ে ভাল সময় বর্ষাকাল। তখন ঝর্ণা গুলোতে বেশ পানি থাকে। তবে অতি বর্ষার সময় ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা থাকে। তাই বর্ষায় ঘুরতে গেলে সেই ব্যাপারেও সাবধান থাকা ভালো। এছাড়া বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারবেন, তবে পানি না থাকলে তেমন ভালো লাগবে না।
আমার কাছে এই ঝর্ণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছে ঝিরি পথটাই। নাপিত্তাছড়ায় গেলে আমি বলব, যত ভোরে যাওয়া সম্ভব, তত ভোরেই যাওয়া উচিৎ। রোদ চড়ে গেলে কষ্ট হয়। আমরা ট্রেকিং শেষে যখন রেললাইনের কাছের সেই দোকানে ফিরলাম, তখন বাজে মাত্র বেলা ১১টা!
কীভাবে যাবেন নাপিত্তাছড়া ট্রেইল
বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে যাত্রা করে নাপিত্তছড়া আসা যায়। ঢাকা থেকে যেকোনো বাসে করে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারী বাজারে নামতে হবে। এছাড়া ট্রেনেও চট্টগ্রাম নেমে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ারী বাজারে আসা যায়। তাছাড়া চট্টগ্রামের অলংকার থেকে বাসে নয়দুয়ারীবাজার যেতে পারবেন। নয়দুয়ারী বাজারে নেমে সেখান থেকে স্থানীয় গাইড নিয়ে অথবা নিজেই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় চলে যেতে পারেন। নয়দুয়ারী থেকে হেঁটে যেতে ৩০/৪০ মিনিট লাগবে।

থাকা
নয়দুয়ারী থাকার ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে সীতাকুন্ড পৌরসভায় থাকার জন্য কিছু ভালো মানের হোটেল আছে। এছাড়া সরকারি ডাকবাংলা আছে। তবে ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে ভাটিয়ারী বা চট্টগ্রাম শহরে আসতে হবে।
খাওয়া
নদুয়ারহাটে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা নাই। তবে রেললাইনের আগে কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে এবং ট্রেইল শুরুর আগেই পেয়ে যাবেন সাজু ভাইয়ের হোটেল। তবে উভয় জায়গাতেই খাবারের অর্ডার দিয়ে ট্রেইল শুরু করা শ্রেয়; কারণ ট্রেইল শেষে এসে খাবার নাও পাওয়া যেতে পারে। রেল লাইনের কাছের দোকানগুলোর খাবারের মান আমার কাছে তেমন একটা ভালো লাগেনি। এবং এদের বাড়িতে কাপড় পরিবর্তন করার সুবাদে রান্নার পরিবেশ দেখার সুযোগ হয়েছিল। খুবই নোংরা পরিবেশে রান্না করা হয়। তাই আমার সাজেশন থাকবে, একটু কষ্ট করে হলেও সীতাকুন্ডে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে।
সতর্কতা ও টিপস
- যেহেতু প্রায় পুরো পথই পাহাড়ী ও ঝিরি তাই ভাল মানের গ্রিপসহ জুতা কিংবা এংকলেট পরে ট্রেকিং করা সুবিধাজনক।
- পাথুরে রাস্তা পিচ্ছিল থাকে, তাই সেইদিকে সতর্ক থাকা উচিৎ।
- হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে এই ট্রেইলে রওনা হওয়া ভালো।
- অতি বর্ষায় ঝিরিতে অনেক পানি থাকে তাই সেই ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিৎ।
- সাথে করে প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ রাখা ভালো।
- স্থানীয় মানুষদের সাথে ভালো আচরণ করবেন।
- ছোট বাচ্চা ও অতি বয়স্ক কাউকে নিয়ে এই ট্রেইলে না যাওয়াই ভালো।
- পাহাড় বা ঝিরির কোথাও অপচনশীল আবর্জনা ফেলে পাহাড় দূষিত করবেন না।