মশার কাছে আপনাকে সুস্বাদু করে তোলে যে ভাইরাসগুলো!
সম্প্রতি সেল জানার্লে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গবেষকরা দাবি করেছেন যে, জিকা ও ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাস মানুষ এবং ইঁদুরকে আশেপাশের মশার কাছে সুস্বাদু করে তোলে।
জিকা ও ডেঙ্গু ভাইরাস মানুষের শরীরে মাইক্রোবায়োম তৈরি করে, যা মশাদের আকৃষ্ট করার জন্য সুঘ্রাণ নিঃসরণ করে। ফলে মশারা ঘ্রাণে আকৃষ্ট হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত পান করে এবং পরবর্তীতে সেই আক্রান্ত রক্তের ভাইরাস বহন করে। এরপর, ভাইরাস বাহক মশাটি যখন অন্য সুস্থ মানুষের রক্ত পান করতে যায় তখন ভাইরাস সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে।
এই গবেষণায় প্রথমেই গবেষকেরা সন্দেহ করেন যে, ডেঙ্গু এবং জিকা ভাইরাস মশাকে আকৃষ্ট করার জন্য কোনো বিশেষ উপায় অবলম্বন করছে। যেহেতু আগে থেকে জানা আছে যে, ম্যালেরিয়া ও সাধারণ সংক্রামক ভাইরাসগুলো উভয়ই মানুষের শরীরের ঘ্রাণ পরিবর্তন করে। তাই, গবেষকেরা ধারণা করেন যে, ডেঙ্গু ও জিকাও একই উপায় অবলম্বন করতে পারে!
#আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষায় বিশ্বব্যাংকের অনুদান পেল বাংলাদেশ
ধারণার ওপর ভিত্তি করে গবেষকেরা প্রথমে কিছু জিকা ও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত ইঁদুরকে এবং কিছু সুস্থ ইঁদুরকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করে৷ তারা দেখতে চেয়েছিল, একটা আক্রান্ত ইঁদুরের প্রতি সাধারণ মশার প্রতিক্রিয়া কেমন! মজার বিষয়, যখন মশার কাছে আক্রান্ত ও সুস্থ দুই প্রকারই ইঁদুরকেই রাখা হয়, তখন মশারা আক্রান্ত ইঁদুরকেই বেছে নেয় এবং তার রক্ত পান করে।
তারপর গবেষকেরা ল্যাবোরেটরিতে, আক্রান্ত ইঁদুরের শরীরের ঘ্রাণ নিঃসরণের অণুগুলোকে পরীক্ষা করেন এবং তারা এমন কিছু অণু শনাক্ত করতে সক্ষম হোন যা সংক্রামিত ইঁদুরদের মধ্যে বেশি ছিল। পরবর্তীতে সেই অণুগুলোকে তারা পৃথক করেন এবং তারা ‘অ্যাসিটোফেনন’ নামক এমন একটি অণু পান, যেটা মূলত মশাকে আকৃষ্ট করে। এই পরীক্ষায় মানুষের শরীরেও এই ‘অ্যাসিটোফেনন’ -এর উপস্থিতি মেলে।
মূলত, মানুষ ও ইঁদুরের শরীরে অ্যাসিটোফেনন কিছু ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা তৈরি হয় এবং তা মানুষ ও ইঁদুরের ত্বকে বৃদ্ধি পায়। সাধারণত সুস্থ মানুষ বা ইঁদুরের শরীরের ত্বকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড তৈরি করে এই ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু, মানুষ ও ইঁদুর যখন জিকা বা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন পরিমাণ মতো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইড তৈরি হতে পারে না, ফলে ব্যাসিলাস ব্যাক্টেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
এই বিষয়ে ইউকন হেলথের ইমিউনোলজিস্ট এবং গবেষক পেঙ্গুয়া ওয়াং বলেছেন- ‘মশাকে অধিক আকর্ষণ করে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার জন্য, হোস্টের ত্বকের মাইক্রোবায়োমকে ম্যানিপুলেট করে।’
#আরও পড়ুন: হৃদরোগ প্রতিকারে গবেষকরা দেখালো আশার আলো!
এছাড়াও এই গবেষকেরা একটি প্রতিরোধকমূলক পরীক্ষাও করেছেন। তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ইঁদুরকে এক ধরনের ভিটামিন এ ডেরিভেটিভ ও আইসোট্রোটিনোইন ডোজ দেন। এর ফলে ইঁদুরের ত্বকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল পেপটাইডের উৎপাদন বাড়ে এবং ব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে তাদের শরীরে ‘অ্যাসিটোফেনন’ অণু উৎপাদন কমায় মশাদের আকৃষ্ট করার সুঘ্রাণও কমে এবং মশা দ্বারা অন্যরা সংক্রমিত হবার হারও কমে।
উল্লেখ্য, গবেষণাটি এখনো অ্যানিমেল ট্রায়ালে সীমাবদ্ধ। তবে, গবেষকরা বলেছেন, তারা সংক্রামিত মানুষের শরীরে বিশ্লেষণ করে প্রতিষেধক ট্রায়াল করার মতো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আশার কথা হলো, এই গবেষণাটি হিউম্যান ট্রায়ালেও সফল হলে, প্রতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মৃতের সংখ্যা কমবে, সেই সাথে জিকাতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের অনাগত সন্তানের জন্মত্রুটিও হ্রাস করবে।
তথ্য সূত্র: সায়েন্স ডেইলি