লাইফস্টাইলস্বাস্থ্যস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

মেয়েরা কীভাবে ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্টের যত্ন নেবেন!

সৌন্দর্য চর্চায় ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু, মেয়েরা নিজের মুখ, চুল, হাত-পা, বা শরীরের যতটুকু যত্ন নেয়, ঠিক ততটাই অবহেলা করে তাদের ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্টের ক্ষেত্রে। অথচ, মেয়েদের শরীরের সবচেয়ে সেনসেটিভ ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো এই ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্ট। ভ্যাজাইনার সঠিক যত্ন না নিলে হতে পারে ইনফেকশন, ইচিং, এমনকি ক্যান্সার অবধি। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো মেয়েদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ভ্যাজাইনা নিয়ে। মেয়েরা কীভাবে ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্টের যত্ন নেবেন! তা জানব!

১| ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করা:

আমরা আমাদের মুখের ত্বকের জন্য ফেসওয়াশ, ক্রিম, টোনার, কত কিছু কিনি! আবার চুলের জন্য শ্যাম্পু, কণ্ডিশনার কত কী! তেমনি মেয়েদের প্রাইভেট পার্ট বা ভ্যাজাইনার জন্য প্রয়োজন ইন্টিমেট ওয়াশের। কারণ ইন্টিমেট ওয়াশ এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে আমাদের ভ্যাজাইনার পিএইচ এর ভারসামাই থাকে, সেই সাথে বিভিন্ন জীবাণু হতে রক্ষা করে। বাজারে বহু ধরনের ইন্টিমেট ওয়াশ পাওয়া যায়। তবে যদি খুব বেশি খরচা করতে না চান, তবে ফ্রিডম কোম্পানির ইন্টিমেট ওয়াশটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ওয়াশটি অল্প দামে বেশ ভালো কাজ করে এবং মেয়েদের মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হবার পর থেকেই ইন্টিমেট ওয়াশ ব্যবহার করা উচিত।

২| সাবান ব্যবহার না করা:

আমরা অনেকেই ইন্টিমেট ওয়াশের সাথে পরিচিত না, আবার পরিচিত হলেও টাকা খরচের ভয়ে ব্যবহার করি না। কিংবা ভাবি সাবান আর ইন্টিমেট ওয়াশে তো একই, পরিষ্কারক হিসাবে কাজ করে। যদি এমন চিন্তাধারা হয়, তবে জেনে রাখুন- সাবান তৈরি করা হয় উচ্চ মাত্রার ক্ষার ও বেশি পারফিউম দিয়ে। ফলে আমাদের ভ্যাজাইনার পিএইচ সাধারণত ৩.৫-৪.৫ হয়। কিন্তু, সাবানের অতিরিক্ত ক্ষার ও পারফিউম আমাদের ভ্যাজাইনার পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে ভ্যাজাইনাতে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে আমাদের ভ্যাজাইনার ক্ষতি করে। কখনক ইনফেকশন বা ইচিং হয়। তাই সাবান ব্যবহার বর্জন করতে হবে।

৩| সঠিক আন্ডারগার্মেন্টস কিনুন:

অনেক মেয়েই ভাবেন—সঠিক আন্ডারগার্মেন্টস আবার কী! একটা হলেই তো হয়। আপনার মানতে কষ্ট হলেও সঠিক আর্ডারগার্মেন্টস অবশ্যই জরুরি। কেননা,আরাম ও স্বাস্থ্যের সাথে আন্ডারগামেন্টস বা পেন্টির রয়েছে যোগসূত্র। তাই সঠিক আন্ডারগার্মেন্টস বা পেন্টি কিনুন কিছু বিষয় লক্ষ্য রেখে—
* যে কাপড় বা ফেব্রিকসের পেন্টি কিনছেন তা আরামদায়ক কিনা!
* পেন্টিটি আপনার সাইজের কিনা!
* অতিরিক্ত ঢিলে অথবা খুব বেশি টাইট পেন্টি কেনা উচিত নয়।
* প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য কটন কাপড় বা ফেব্রিকের পেন্টি কিনুন।
* এছাড়াও অন্য কাপড় বা ফেব্রিক কিনলে দেখুন সফট কিনা, বা সহজেই ধোয়া যায় কিনা।
এছাড়া বাজারে নিয়মিত ব্যবহারের অনেক পেন্টি বা আন্ডারগার্মেন্টস পাওয়া যায়। দাম একটু বেশি হলেই এসব ব্রান্ডের পেন্টি ব্যবহার করতে পারেন। যেমন—Valene Classic Panty, Valene All Weather Super Soft Cotton panty, Valene Summer Day Breathable Lacy Panty, ইত্যাদি।

৩| ভ্যাজাইনার বেসিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন:

ভ্যাজাইনার বা প্রাইভেট পার্টের বেসিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা উচিত। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে ভ্যাজাইনায় বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ ঘটে রোগ সৃষ্টি হতে পারে। যেসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানবেন—
* ভ্যাজাইনার লোম পরিষ্কার রাখুন এবং সঠিক উপায়ে পরিষ্কার করুন। তবে, কেমিক্যাল পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
* ব্যবহৃত পেন্টি প্রতিবার ব্যবহারের পরে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন এবং কড়া রোদে ভালো ভাবে শুকিয়ে নিন। কারণ ভেজা পেন্টিতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে।
* ভ্যাজাইনার যত্নের জিনিসপাতি বা পেন্টি একটি শুষ্ক ও ভালো জায়গায় রাখুন। কারণ ভালো, শুষ্ক জায়গায় সংরক্ষণ না করলে তাতে পোকামাকড় ও ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটতে পারে।
* পিরিয়ড চলাকালীন স্যানেটারি ন্যাপকিন ২-৩ ঘণ্টা পর পর পরিবর্তন করুন। আর যদি মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করেন তবে তা প্রতিবার ব্যবহারের পূর্বে সঠিকভাবে পরিষ্কার করে নিন এবং ব্যবহার শেষে পরিষ্কার করে তুলে রাখুন।
* বাইরে থেকে ঘরে ফিরে বা ঘরে কয়েক ঘণ্টা গেলে, ঘাম হলে সঙ্গে সঙ্গে পেন্টি পরিবর্তন করুন।
* এছাড়াও পিরিয়ডের সময়কার পেন্টি ও নিয়মিত ব্যবহারের পেন্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করুন।

৪| সঠিক স্যানিটারি প্যাড বা মেন্সট্রুয়াল কাপ কিনুন:

ভ্যাজাইনা ঠিক রাখতে পিরিয়ডের সময়ে ব্যবহার করা স্যানিটারি ন্যাপকিন বা মেন্সট্রুয়াল কাপ নির্বাচনে সচেতন হওয়া উচিত। তবে স্যানটারি ন্যাপকিনের তুলনায় মেন্সুট্রুয়াল কাপ বেশি আরামদায়ক ও কার্যকরী।

৫| ডায়েট মেনে চলুন:

সাধারণত মেয়েদের ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্টে অনেজ উপকারি ব্যাকটেরিয়া থাকে। যারা ভ্যাজাইনার এরিয়াকে সুরক্ষিত রাখে। তো, আপনার ডায়েট চার্টে এমন সব খাদ্য রাখুন যা এইসব ব্যাক্টিরিয়ার প্রয়োজনীয় উৎপাদন বাড়ায়, এবং ভ্যাজাইনাকে সুস্থ রাখে। এক্ষেত্রে আয়রন আচগে এমন খাবার, যেমন- পালংশাক, কচুশাক, বাঁধাকপি ইত্যাদি। এছাড়াও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার, লেবু কমল, ইত্যাদি খান। ভিটামিন সি খারাপ ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে। এছাড়াও ভিটামিন ই খেতে পারেন, যা আপনার ভ্যাজাইনার রুক্ষতা দূর করবে।

৬| নিয়মিত ব্যায়াম করুন:

আরো পড়ুন: গরমে রোগ-বালাই এড়াতে যা করণীয়

বেশ কিছু ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আছে যা মেয়েদের ভ্যাজাইনা বা প্রাইভেট পার্টের জন্য খুবই উপকারি। বিশেষ করে, কেগেল এক্সারসাইজ। এই এক্সারসাইজ মেয়েদের ভ্যাজ্যাইনার পেলভিক ফ্লোর মাংসপেশিকে শক্তিশালী কিরতে সহায়তা করে। তাছাড়াও এই ব্যায়ামগুলো ইউটেরাসভো ও ওভারিকে ভালো রাখে। তাই বলা যায়, ভ্যাজাইনাকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নেই।

এছাড়াও যৌন মিলনের পরে ভ্যাজাইনা পরিষ্কার রাখুন এবং সন্তান জন্ম দিতে না চাইলে প্রতিবার যৌন মিলনে কনডম ব্যবহার করতে সঙ্গীকে উৎসাহিত করুন। কেন না, ভ্যাজাইনাতে বিভিন্ন রোগ ব্যধি যৌন মিলনের কারণেই ঘটে। তাই এই বিষয়ে সর্তক থাকা উচিত। আর অবশ্যই নিজের ব্যবহৃত জিনিস অন্যদের থেকে আলাদা রাখবেন এবং অন্যদের ব্যবহৃত পেন্টি বা জিনিস ব্যবহার করবেন না।

আমাদের শরীরের অন্যান্য সব অংশের মতোই ভ্যাজাইনাও একটা একটা অংশ। তাই সামাজিক লজ্জায় নিজের ভ্যাজাইনার প্রতি অবহেলা করা উচিত নয়। কারণ ভ্যাজাইনার প্রতি অবহেলায় তা মরণব্যাধি জরায়ু ক্যান্সার পর্যন্ত ঘটাতে পারে। তাই নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন। আর যদি আমাদের আজকের এই ফিচারটি আপনাদের ভালো লাগে তবে অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন এবং এই ধরনের উপকারি ফিচার বা আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।