স্বাস্থ্যস্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কী এবং এটি কীভাবে সামলাবেন?

কোভিড-১৯ এ পৃথিবীর প্রায় ৯৯% মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে লড়াই করে বেঁচে থেকেছেন, অনেকে হারিয়ে গেছেন অকালে। এখনো চলছে কোভিডের সংক্রামণ। এই মহামারীর অনেক ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়েছে। তবে, ভ্যাক্সিন দেওয়ার পরও অনেকেই আবার আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পোস্ট কোভিড সিনড্রোম এ ভুগছেন। হতাশার কথা হলো, বর্তমানে ভ্যাক্সিন দিয়ে কোভিড আটকানো যাবে না। কারণ ভ্যাক্সিন শুধুমাত্র সংক্রমণের তীব্রতা কমায়; এছাড়াও কোভিড ভ্যাক্সিন অন্যান্য ভ্যাক্সিনের মতো সম্পূর্ণ কার্যকরী নয়। তাই ভ্যাক্সিনেশনের ২-৩ মাসের মধ্যে আবার আক্রান্ত হতে পারেন। তাছাড়াও ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট আসলে তখন আক্রান্ত হবেনই, পুরোনো ভ্যাক্সিন কোনো কাজ করবে না!

এছাড়া করোনা একটা আরএনএ ভাইরাস। এই ভাইরাস আমাদের শরীরে ঢুকলে আমাদের জেনেটিক কোড পরিবর্তন করে ডিএনএ মিউটেশন ঘটাতে পারে! ফলে কোভিড আক্রান্তরা কিছু বিষয় সারাজীবন বয়ে বেড়াবে; এছাড়াও ডিএনএ-তে বড়ো কোনো পরিবর্তন হলে তা ভবিষ্যত প্রজন্মেও স্থানান্তর হতে পারে!

⏩ আরও পড়ুন: নারীরাই বেশি ভিটামিনের অভাবে ভোগেন!

তো আজকে মূলত আমাদের আলোচনার বিষয়, পোস্ট কোভিড সিনড্রোম নিয়ে! এই পোস্টে আমরা জানব, পোস্ট কোভিড সিনড্রোম আসলে কী! পোস্ট কোভিড সিনড্রোম মোকাবিলায় কী কী করবেন!

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কী?

পোস্ট কোভিড সিনড্রোম বলতে, ধরুন আপনি কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, আবার কিছুদিন পর দেখলেন আপনার কোভিড টেস্ট রেজাল্ট নেগেটিভ। আপনি সুস্থ অথচ তখনো আপনার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে। হতে পারে সেটা ক্লান্তি বা নিদ্রার অভাব, হতে পারে শ্বাসকষ্টসহ জটিল কোনো সমস্যা। মূলত এই প্রবণতাকেই বলায় হয় পোস্ট কোভিড সিনড্রোম বা লং কোভিড।

পোস্ট কোভিড সিনড্রোমের স্থায়িত্ব এক-দেড় মাস থাকে, এরপর অনেকে আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে যায়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৬-৯ মাস অবধিও এর স্থায়িত্ব হয়, অনেকেই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না।

চলুন এইবার জেনে নেই, পোস্ট কোভিড সিনড্রোম মোকাবিলায় কী কী করবেন!

⏩ আরও পড়ুন: ডিটক্স ড্রিংকস: গরমে আপনাকে হাইড্রেটেড ও ফিট রাখবে!

পোস্ট কোভিড সিনড্রোমের প্রতিকার:

  • হেলদি ডায়েট মেনে চলুন। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পুষ্টিকর, ভিটামিন যুক্ত শাক-সবজি রাখুন। এছাড়াও প্রোটিনের জন্য সামুদ্রিক – দেশি মাছ রাখুন।
  • চেষ্টা করুন প্রতিদিনই কিছু মৌসুমী ফল খেতে। যেমন: এখন গ্রীষ্মকালে আম, লিচু, কাঁঠাল, পেঁপে, জাম, লটকন, ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়। তো এগুলো খেতে পারেন। আবার শীতের মৌসুমে শীতকালের ফল খেতে পারেন।
  • প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন। কমপক্ষে আড়াই লিটার। আমরা জানি, শরীর সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই।
  • নিয়মিত লেবুর রস বা লেবুর শরবত খান।
  • লেমন কিংবা তুলসী চা খান এবং দুধ চা পরিত্যাগ করুন।
  • ভিটামিন ই-সি-এ-কে-বি৬ আছে এমন ড্রাই ফুড বা শুকনো ফল খান; যেমন- বিভিন্ন ধরনের বাদাম, খেজুর ইত্যাদি।
  • সবসময় পর্যাপ্ত আলো বাতাসের মধ্যে থাকুন, ঘর-অফিসের দরজা জানালা খোলা রাখুন।
  • যাদের গায়ের ব্যথা থাকে, তারা গায়ের ব্যথা কমানোর জন্য একদম ভোর বেলা সূর্য উঠার আগে, আর বিকেলে সূর্যের আলো কমে গেলে, হাঁটাহাটি করুন।
  • ঘরের মধ্যে ফ্রি ওয়ার্ম আপ যেসব ব্যায়াম আছে ওসব করতে পারেন।
  • প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট মেডিটেশন করুন। ব্রেথ এক্সারসাইজ করুন।
  • যাদের কোভিডের ফলে চুল পড়ে যাচ্ছে তারা চুলের জন্য বেশ কিছু অর্গানিক ট্রিটমেন্ট আছে, ওগুলো দিতে পারেন! যেমন: ভিটামিন ই ক্যাপসুল, অর্গানিক তেলের সাথে মিক্স করে দেওয়া। পেঁয়াজ বাটা, কাঁচা ডিম চুলে দেওয়া! চুলের ঘরোয়া যত্ন নিন। এই নিয়ে আমাদের আর একটি আর্টিকেল আছে ওটা পড়তে পারেন।
  • প্রতিদিন খাবার খাওয়ার একটা নির্দিষ্ট রুটিন করুন! চেষ্টা করুন প্রতিদিন একই সময়ে খাবার খাওয়ার! আর একসাথে বেশি না খেয়ে, প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর অল্প অল্প করে খান এবং প্রতিদিন খাবার থেকে সব মিলিয়ে ২২০০-২৫০০ ক্যালরি নেওয়ার চেষ্টা করুন।
  • ঘুমের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ও উপযুক্ত সময় হলো- রাত ৯ টা থেকে ভোর ৪ টা। প্রতিদিন এই সময়টায় ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
  • আপনি যদি শহরে থেকে থাকেন তবে কিছুদিন শহরের যান্ত্রিক বা বন্দী জীবন থেকে বের হয়ে, গ্রাম বা কোথাও ভ্রমণ করুন। গ্রামের বা কোলাহলমুক্ত নির্মল পরিবেশ আপনার সুস্বাস্থ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
  • অন্য রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কোনো ওষুধ দিলে খেতে পারেন, তবে ঘুমের জন্য ওষুধ খাবেন না! কেন না, একবার ঘুমের ওষুধে নির্ভর হয়ে গেলে, সারাজীবনের জন্য ঘুম হারাম হয়ে যাবে! তাই প্রাকৃতিক উপায়ে ঘুম ঠিক করুন।
  • সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপস হলো নিজেকে মানসিকভাবে শক্ত রাখুন ও হাসিখুশি থাকুন। মনে রাখবেন আপনার ইমিউনিটিই সকল রোগের ওষুধ। আর এই ইমিউনিটি অনেকটাই নির্ভর করে আপনার মানসিক অবস্থার ওপর।

⏩ আরও পড়ুন: বর্ষা মৌসুমে পায়ের বিশেষ যত্ন!


প্রিয় পাঠক, আপনারা এতক্ষণ জানলেন পোস্ট কোভিড সিনড্রোম কী? পোস্ট কোভিড সিনড্রোম মোকাবিলায় কী কী করতে হবে! আশাকরি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন এবং এই ধরনের আর্টিকেল পেতে অনুলিপির সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।