শিল্প ও সাহিত্য

ফারজানা রফিকের চারটি কবিতা

ফারজানা রফিকের কবিতা

“আমার অন্তরীক্ষ”

এই নীল অন্তরীক্ষ আমার
এই নীল অন্তরীক্ষ আমার, এই শহুরে জলধর আমার।

হোক না তা শহুরে কোলাহলে আঁধার,
তবুও এই শহুরে জলধর আমার।
যদি কখনো এই নীল অন্তরীক্ষে ছেয়ে যায়
যন্ত্রের আর্তনাদ, না পাওয়ার চিৎকার, তবুও এই নীল অন্তরীক্ষ আমার।

না আসুক বরষা হাজার,
শুধু যদি ছেয়ে যায় হারানোর হাহাকার কিংবা মন খারাপ না পাবার,তবুও আমি বলব, এই নীল অন্তরীক্ষ আমার,এই শহুরে জলধর আমার”।

আরও পড়ুন: প্রয়াণ দিবসে ড. এপিজে আবদুল কালাম!

“আমি প্রকৃতি ঘৃণা করি”

আমি প্রকৃতির প্রেমে পড়ি নি কখনো।
প্রকৃতির মতো লাস্যময়ী নিষ্ঠুর কাউকে দেখিনি এখনো।
এই তো সেবার পনেরো ফুট উচু ঢেউ এসে
আওলাদ মিয়ার বসত ভিটা গুড়িয়ে দিয়ে গেল,
হায়!হায়! বলে কত প্রকৃতিপ্রেমী ছুটে এসেছিল।
কিন্তু কেউ আওলাদ মিয়ার কাজল টানা চোখের
বলদ দুটোকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলো না।

আমি প্রকৃতির প্রেমে পড়িনি কখনো।
প্রকৃতি আমায় কেবল নিষ্ঠুরতা শিখিয়েছে।
নিজেকে সাজাতে কীভাবে অন্যের ঘর ভাঙতে হয় বলে দিয়েছে।
অবাক হয়েছ শুনে আমি প্রকৃতি ঘৃণা করি বলে?
গেল বন্যায় আমি দেখেছি কীভাবে
নিজের কোল সাজাতে মানুষ ভাসালো দলে দলে,
দেখেছি আমি ঝড়ের তান্ডব,
যেন মহাপ্রলয় ধেয়ে এসেছে মাঠের বেলগাছটার ধারে।
দেখেছি কেমন করে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে
শীতের কামড় বসিয়েছিল জহির মিয়ার হাড়ে।
দেখেছি কেমন বুনো ঘাস জ্বলে মিশে ছিল মাটিতে,
ফুলবানুর বাচ্চাগুলো পায়নিকো দুমুঠো শাক বাটিতে।

তোমরা প্রকৃতিপ্রেমীরা যাকে কাজল মেঘ বলো,
সেই মেঘের নিষ্ঠুরতা দেখেছি আমি,
বামুনের ঘরের ছাদ চুইয়ে ভাসিয়ে দিয়েছিল ভিটে
প্রকৃতি এসে তো হাত বুলালোনা তার ভগ্ন হৃদয় পিঠে।
আমি প্রকৃতির প্রেমে পড়ি নি কখনো।
প্রকৃতির মতো লাস্যময়ী নিষ্ঠুর কাউকে দেখিনি এখনো।
অবাক হয়োনা শুনে, আমি প্রকৃতিকে ঘৃণা করি বলে।
প্রকৃতি সব নিয়ে যায় সৌন্দর্যের ছলে।
আমি দেখেছি প্রকৃতির পানে চেয়ে থাকা মানুষের চোখে
আশা হারা হবার অবিশ্বাস,
দেখেছি চেয়ে নির্বোধের উপর প্রকৃতির মিথ্যা আশ্বাস।
আমি তুলোর মতো মেঘের জ্বলন্ত রূপ দেখেছি,
দেখেছি কীভাবে নিংড়ে নিয়েছে জীবনের রস।
তাই আজ আমি প্রকৃতি ঘৃণা করি।
অবাক হয়োনা শুনে আমি প্রকৃতির প্রেমে কখনো পড়িনি বলে।

“পাগল”

আমি যেবার মারা গেলাম প্রথমবার,
এই পাথরের শহরে আমার বুকজুড়ে ছিল হাহাকার,
মন জুড়ে ছিল শুধু তাড়া
দুলির জন্য লাল টুকুটুকে জামাটা নিয়ে ঘরে ফেরার।
কিন্তু হায়!
কেউ কি শুনেছিল সেদিন আমার আর্তনাদ ?
পাথরের দেয়ালে ঘুরে ফিরেছিল না পারার সেই ব্যথিত অনুনাদ।
সেদিন বুঝেছিলাম, এই শহরে আপন নয় কেউ কার।
এই পাথরের শহরে আসলে আছে কী কেউ স্বজন আর?
তবু আমি ঘরে ফিরেছিলাম
দুলির লাল টুকুটুকে জামাটা নিয়ে৷
আমি ঘরে ফিরেছিলাম
ক্ষুধিত উদর, তৃষ্ণার্ত একটা বুক নিয়ে।
একটু ভালোবাসার তৃষ্ণা, মমতার ক্ষুধা ছিল আমার বুক জুড়ে।
কোনো মানুষের চোখ দেখেনি সে আমার আমিকে।
হয়তো শকুনেরা চেয়েছিল একটা অর্ধমৃত মানুষের পানে।
কিন্তু কেউ কি জানত আমি আবারো মারা যাবো?
যেদিন ঘোর বর্ষায় আমার ঘরের ছাদ চুইয়ে পানি পড়বে,
দুলির কাঁচা-সোনার মতো রঙ ফিকে হয়ে যাবে?
সেদিন আমি আবারো মারা যাবো?
এই শহরের বুকে একটা জীবন্ত লাশ হবো?
আমি দুলিকে বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম শহরময়।
সেদিন একটু ভালোবাসার তৃষ্ণা, মমতার ক্ষুধা ছিল আমার বুক জুড়ে।
কোনো মানুষের চোখ দেখেনি সে আমার আমিকে।
এই পাথরের শহরে আসলে আছে কী কেউ স্বজন আর?
পাথর গলা এই শহরে কেউ শুনেনি আমার হাহাকার।
পাথরের দেয়ালে ঘুরে ফিরেছিল আমার ব্যথিত অনুনাদ।
তারপর আমি রোজ মরতে থাকলাম।
কিন্তু কেউ আমার আমিকে শুনতে এলো না।
আমি একটা অর্ধমৃত লাশ হয়ে ঘুরতে লাগলাম শহরময়।
আর লোকে আমায় বলতে লাগল “পাগল”।

“আমার নীরবতা”

স্ববেশী আমি মৃত্যুর উন্মাদনায়
যখন ছিলাম উত্তাল, রুদ্ররূপী,
তোমরাই বলেছিলে বারংবার –
“স্নিগ্ধ শুভ্রতাই নারী”,
বল তবে কেন তোমাতে এত চঞ্চলা? কেন মুক্ত আকাশের ডাকে,
চোখ মেলে তুমি চাবে?
কেন নতুন বসন্ত তোমায় ভাবাবে ?”

আমি নীরব ভূষণ গায়ে জড়ালাম।
তবুও কোন সবার অভিযোগ?
নীরবতা থেকেও কী খুঁজছ প্রতাপ ? তবে শুনে নাও –

আমি হারিয়ে গেলাম।
কালবোশেখীর দুরন্ততা আমায় ছুবে না আর,
আসবে না আর স্বপ্ন হয়ে দূর পারাবার,
বরিলাম এবার মৃত্যুরে আমি
আমার আপন করে।

ফারজানা রফিকের কবিতা

ফারজানা রফিক (ফারিয়া)
বি. এসসি (কৃষি)
শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন: লংমার্চ, স্মারকলিপির পর এবার ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিলেন ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দীন রনি!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।