মনোযোগ বাড়ানোর এক ডজন একটি কৌশল!
![মনোযোগ বাড়ানোর এক ডজন একটি কৌশল!](https://anolipi.com/wp-content/uploads/2022/07/Untitled-Design25-780x470.jpeg)
ঘটনা ১: এবার ক্লাস টেনে উঠেছে জাইমা (ছদ্মনাম)। সামনে তার এস এস সি পরীক্ষা। শিক্ষা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষায় বসতে হলে চাই যথাযথ প্রস্তুতি। কিন্তু কিছুতেই পড়ায় মনোযোগ বসছে না তার। ইতিউতি করে মন চলে যাচ্ছে এদিক ওদিক। বয়ঃসন্ধির এই সময়টায় কি আর মন স্থির থাকতে চায়?
ঘটনা ২: সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন আশফাক (ছদ্মনাম)। অ্যাকাডেমিক রেজাল্ট বেশ চমৎকার। সিভিতে যোগ হয়েছে বেশকিছু ছোটখাটো অভিজ্ঞতা। কিন্তু চাকরি প্রত্যাশী আশফাক নতুন করে চাকরির পড়াশোনা করতে গিয়ে পড়লেন অকূল পাথারে! কী পড়বেন কী পড়বেন না ভাবতে ভাবতেই পরীক্ষার দিন তারিখ কাছাকাছি চলে এসেছে। অথচ দুশ্চিন্তায় মনোযোগ ধরে রাখাই দায়!
আজকাল মনোযোগ ধরে রাখা যেন ছোটোখাটো যুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে অনেকেই অমনোযোগীতায় ভুগছেন। কী? মনোযোগহীনতার এই গ্যাঁড়াকলে আপনিও ভুগছেন না তো? যদি ভুগে থাকেন, তবে এই লেখাটি আপনার জন্যেই!
মনোযোগ বাড়াবেন যেভাবে
ভূমিকা:
অমনোযোগীতার সমস্যা বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে একটি অতি সাধারণ একটি সমস্যা। এই সমস্যায় আট থেকে আশি, প্রায় সব বয়সের মানুষই কমবেশি ভুগে থাকেন। তাহলে চলুন আজ জেনে নেই মনোযোগ বাড়ানোর কিছু কার্যকরী উপায়।
পরিমিত খাদ্যাভ্যাসে বাড়বে মনোযোগ
নিয়মিত মনোযোগ ধরে রাখতে হলে চাই পুষ্টিকর সুষম খাবার। ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ খাবার আমাদের শরীরকে করে তোলে সুস্থ ও সতেজ। তাই মনযোগ ধরে রাখতে ও শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে করতে প্রতিদিন পরিমিত আহারের অভ্যাস গড়ে তুলুন!
পানি খেতে ভুলবেন না
আমাদের শরীরের ৭০% অংশ জুড়েই রয়েছে পানি। তাই শরীর সুস্থ ও সতেজ রাখতে পানি পানের বিকল্প নেই। আমাদের শরীরের জন্যে দৈনিক মোট ২-৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। এর কম পানি পান করলে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। যা কমিয়ে দিতে পারে আপনার মনোযোগ।
মনোযোগ বাড়াতে চাই পরিমিত ঘুম
সারাদিনের দৈহিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করতে ও শরীর, মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে পরিমিত ঘুমের বিকল্প নেই। ঘুমের ঘাটতির ফলে ঘটতে পারে নানান জটিলতা। মনযোগহীনতা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ক্লান্তি লাগা ইত্যাদি নানান সব সমস্যার মূল কারণ নিদ্রাহীনতা। এজন্যে সময়মতো ঘুমিয়ে ভোরবেলা ওঠার অভ্যাস করতে হবে।
আরও পড়ুন# সিম কার্ড পরিষ্কার করবেন কীভাবে!
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
শারীরিক পরিশ্রম আমাদের মনোযোগকে বাড়িয়ে দিতে পারে। একইসাথে শরীর চর্চা আমাদের শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতেও সহায়ত করে। যা আমাদের মনোযোগ ধরে রাখার অন্যতম প্রধান শর্ত। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চার ফলে ঘুম ভালো হয়। পাশাপাশি বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
মনোযোগ বাড়াতে মন ভালো রাখুন
মন যদি ভালো না থাকে, তাহলে মনোযোগ ধরে রাখবেন কীভাবে? এইজন্যে পড়তে বসার আগে মন ভালো থাকা জরুরি। ফুরফুরে মেজাজে থাকলে সহজেই যে কোনো কাজে মনোযোগী হওয়া যায়। এজন্যে শরীরের পাশাপাশি মনের ব্যাপারেও যত্ন নিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে পারেন।
ফোন থেকে দূরে থাকুন
বর্তমান যুগে মোবাইল ফোনকে বলা হয় মনযোগের প্রধান শত্রু। একটি গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইলের স্ক্রিনটাইম যত বেশি হয়, আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া নোটিফিকেশনের শব্দ আমাদের মনকে সাময়িক উত্তেজিত করে তোলে। ফলে তৈরি হয় ফোন ব্যবহারের আসক্তি। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে এবং দীর্ঘসময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে হলে স্মার্টফোন ব্যবহার কমিয়ে আনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এ কাজে সফল না হচ্ছেন না? ফোনের দিকে বারবার হাত চলে যাচ্ছে? সমস্যা নেই। আছে স্মার্ট সমাধান। প্লেস্টোর থেকে মাই লক অ্যাপসটি ইনস্টল করে নিন। তারপর সময় নির্ধারণ করে চালু করে দিন অ্যাপটির কার্যক্রম। ব্যস! ফোন কল ছাড়া আর কোনো ব্যবহার আপনি করতে পারবেন না। যতই চেষ্টা করুন, খুলবে না ফোনের লক। কী? ফোন হাতে নেই বলে মন খারাপ? তারচেয়ে পড়তে বসে যান। পড়ায় মনোযোগ আনতে কিন্তু পড়ার বিকল্প নেই!
ঘরকে করুন শব্দহীন
আমরা জানি উচ্চশব্দ মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটায়। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে ঘরকে শব্দ নিরোধী বা সাউন্ড প্রুফ করে ফেলুন। তাও পারছেন না? ব্যবহার করুন উন্নতমানের ‘এয়ার প্লাগ’ বা হেডসেট। এরপর পড়তে বসে পড়ুন। দেখুন, শব্দহীনতা কেমন ম্যাজিকের মতোই মনোযোগী করে তোলে আপনাকে!
পড়ার মাঝে বিশ্রাম নিতে ভুলবেন না
একটানা পড়াশোনা করাও কিন্তু মনোযোগের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্যে কখনোই একটানা পড়াশোনা করা উচিত নয়। যারা পড়তে গিয়ে একঘেয়েমিজনিত সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্যে একটানা পড়াশোনা করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই কখনোই একটানা টেবিলে বসে থেকে পড়ার চেষ্টা করবেন না। মাঝেমাঝে পড়ায় বিরতি দিন। সাধারণত প্রতি আধঘণ্টা পরপর ৫ মিনিটের বিশ্রাম নেওয়া উচিত। এতে চোখেরও বিশ্রাম হয়। ফলে নতুন করে পড়তে বসার স্পৃহা জাগে। অপরদিকে একটানা পড়ার ফলে চোখ সহজেই ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে!
আরও পড়ুন# হুমায়ূন আহমেদ : বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র
নিজেকে দিন সেল্ফ ট্রিট
মনোযোগ ধরে রাখতে এই মজার তরিকাটি আপনি অনুসরণ করে দেখতে পারেন। সেল্ফ ট্রিট বলতে আমরা বুঝি নিজেই নিজেকে পুরষ্কৃত করা। এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে প্রথমে আপনি আপনার লক্ষ্য স্থির করুন। ধরুন আপনি ঠিক করলেন একটানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট পড়বেন। তারপর পড়তে বসলেন। ঠিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট পর নিজেকে নিজেই ধন্যবাদ দিন। ছোটখাটো পুরষ্কার দিতে পারেন নিজেকে।
মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এমন জিনিশ সরিয়ে ফেলুন
শুধু মনোযোগ বাড়ানোর কথা ভাবলেই চলবে না। মনোযোগ যাতে ভেঙে না যায় সেই কথাও সমানতালে ভাবতে হবে। এইজন্যে পড়ার টেবিলের আশেপাশে রঙচঙে কোনকিছু বা মনোযোগ আকর্ষী কোন বস্তু রাখা যাবে না। পড়ার টেবিল যথাসম্ভব গুছিয়ে রাখতে হবে। এতে মনোযোগ বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারার সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে।
মিলাতে পারেন পাজল গেম
পাজল গেম, সুডো্কু, রুবিক’স কিউব, ওয়ার্ড গেম ইত্যাদি মিলানোর অনুশীলন করতে পারেন। এ ধরণের খেলায় মস্তিষ্ককে আরো কর্মক্ষম করে তোলা যায়। পাশাপাশি বেড়ে যায় মনোযোগের হার!
![মনোযোগ বাড়াতে মিলাতে পারেন রুবিক'স কিউব](https://anolipi.com/wp-content/uploads/2022/07/Untitled-Design26-300x169.jpeg)
মনোযোগ বাড়াতে অঙ্ক কষুন
প্রতিদিন অঙ্ক কষলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। তাই মনোযোগ ধরে রাখতে প্রতিদিন অন্তত আধঘণ্টা গণিত অনুশীলন করুন। এতে আপনার মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। বৃদ্ধি পাবে মনোযোগ।
![গণিত অনুশীলণ বাড়িয়ে দেয় মনোযোগ](https://anolipi.com/wp-content/uploads/2022/07/Untitled-Design27-300x169.jpeg)
পড়াকে ভাগ করে নিন
আমরা অনেক সময় টানা পড়তে চেষ্টা করি। যেন একদিনেই একটি চ্যাপ্টার পড়ে শেষ করে ফেলবো! এমনটা কখনোই করা যাবে না। পড়ায় যথেষ্ট সময় দিন। টপিক ধরে ধরে পড়া বোঝার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়া করবেন না। একটি টপিক না বুঝে পরবর্তী টপিকে না এগোনোই ভালো। এতে পরের টপিকগুলো বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।
শেষ কথা:
বর্তমান সময়ের অন্যতম সমস্যা মনোযোগের ঘাটতি বা মনোযোগহীনতা। উপরের লেখাটি নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য করবে মনোযোগ ধরে রাখার ব্যাপারে। পাশাপাশি মনোযোগ ধরে রাখার কৌশলগুলোও বাতলে দেবে। লেখাটি পড়ার পর যদি আপনার মনোযোগ ধরে রাখার হার বৃদ্ধি পায় তবেই এই লেখাটি সার্থকতা পাবে!