ফ্রিজ কিভাবে আবিষ্কার হলো?
ফ্রিজ বা রেফ্রিজারেটর এখন ধনী-গরিব সবার ঘরে খাদ্য সংরক্ষণের অন্যতম একটি যন্ত্র। যদিও একসময় কেবল মাত্র সমাজের উচ্চবিত্তরাই ফ্রিজ ব্যবহার করতো, যেটা কেবল শৌখনতাই ছিল। কিন্তু, দিন দিন ফ্রিজের শৌখিনতা পরিবর্তে প্রয়োজনীয়তা হয়ে ওঠে। গরমে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি কিংবা মাসের পর মাস খাদ্য সংরক্ষণেত জন্য ফ্রিজের ভূমিকা নেই। কিন্তু, ফ্রিজ আসলে কী! ফ্রিজ কীভাবে আবিষ্কার হলো? এই ফ্রিজ কীভাবে আবিষ্কার হলো?
রেফ্রিজারেটর বা প্রচলিত ভাষায় ফ্রিজ হলো একটা হিমঘর, যা খাদ্য সংরক্ষণের একটি গৃহস্থালি যন্ত্র। যেহেতু রেফ্রিজারেটর বাইরের তাপমাত্রা থাকে বেশি, তাই এর ভেতরের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা রাখা যায় না। কেননা, আমরা জানি উষ্ণতর বস্তু থেকে শীতলতর বস্তুতে তাপ সবসময় সঞ্চালিত হয়৷ এছাড়াও বিপরীত কিছুও যান্ত্রিক শক্তির ব্যয় ছাড়া এটা অসম্ভব। এর জন্য এমন পদ্ধতির দরকার পড়ে, যাতে করে ফ্রিজের ভেতরের তাপমাত্রাকে বাইরে বের করে আনা যাবে।
আর যেহেতু আমরা জানি, সুপ্ততাপের মাধ্যমে তরল পর্দাথকে বাষ্পে রূপান্তরিত করা যায়। তাহলে যদি ফ্রিজের ভেতরের অংশ শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ ঘেষে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, তবে তো শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠ হতে দরকারি সুপ্ততাপ তরল পদার্থ বাষ্পীকরণের জন্য শুষে নেবে। আবার যদি সেই বাষ্পকে চাপ দিয়ে তরলেও পরিণত করা যায়, তবে সেটা তাপ ত্যাগ করবে ও সেই তাপ বাইরের বের হয়ে যাবে।
তো চলুন জেনে নেই রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ যেভাবে কাজ করে!
আমরা যে ফ্রিজ দেখি তার ভেতরের অংশ ফাঁপা নলের কুণ্ডলী দ্বারা পেঁচানো থাকে, আর এই কুন্ডলীর মাঝে থাকে ফ্রেয়ন বা হিমায়ক পদার্থ। এছাড়াও ফাঁপা নলগুলোর সাথে কম্প্রেসর বা সংকোচক পাম্প জোড়া থাকে। এইবার যখন পাম্প চালু হয় তখন ওই নলের মধ্যে চাপ কমে যেতে থাকে। আর এই চাপ কমে গেলে ফ্রেয়ন বা হিমায়ক পদার্থ খুব তাড়াতাড়ি বাষ্পে পরিণত হয়। তো, ফ্রেয়নের বাষ্পে পরিণত হবার জন্য সুপ্ততাপ ফ্রিজের মধ্যের অংশ থেকে শুষে নেয়। যার দরুণ ফ্রিজের তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতলীকরণ ঘটে।
যখন কম্প্রেসরের সহায়তায় বাষ্প হওয়া ফ্রেয়নকে সংকুচিত করে তা ঘনীভবন কুন্ডলীর ভেতর আনা হয়, তখন ফ্রেয়ন বাষ্প বা গ্যাস সুপ্ততাপ ত্যাগ করে একদম তরল অবস্থায় চলে আসে। তখন আবার পুনরায় তরল ফ্রেয়নকে বাষ্পে পরিণত করার জন্য ওই তাপ বের করে দিতে হয়, কেননা তাপ বের না হলে শীতলীকরণ প্রকোষ্ঠের তাপমাত্রা আবার বেড়ে যাবে। সাধারণ ঘনীভবন কুন্ডলীর বা কন্ডেসারের সাথে যুক্ত থাকা তামার তৈরি জালিতে এই তাপের পরিবহন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সঞ্চালন ঘটে। তারপর তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই আবার শীতল ফ্রেয়নকে বাষ্পে পরিণত করে প্রক্রিয়াটির পুনারাবৃত্তি ঘটানো হয়। ফ্রিজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ ফ্রিজের ভেতর থাকা একটি কম্প্রেসরের সুইচের ওপর। সেটা অন বা অফ করেই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়াও ফ্রিজের দেয়াল তাপ পরিবহন করে না, যার ফলে তাপ ভেতরে ঢুকতে পারে না।
ফ্রিজের আবিষ্কার যেভাবে হয়!
ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, আদিম যুগে মানুষ খাদ্য সংরক্ষণ করতো বরফ, তুষারের মাধ্যমে। রোমান ও গ্রিকরা আইস হাউস বা বরফঘর তৈরি করে সেখানেই বছর ব্যাপি খাদ্য সংরক্ষণ করতো।
তবে দিন দিন খাদ্য সংরক্ষণের চাহিদা যেন বাড়তে থাকে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন মানুষের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্ঠায় এই ফ্রিজ আবিষ্কার হয়।
তবে, কে এই ফ্রিজ আবিষ্কার হলো এর সুস্পষ্ট কোনো ইতিহাস জানা যায়নি। তবে কিছু তথ্য অনুযায়ী ধারণা করা হয়, ১৭৪০ সালে উইলিয়াম কুলিনই নামক স্কটিশ বিজ্ঞানী প্রথম কৃত্রিম ফ্রিজের তত্ত্ব প্রদান করেন। তার তত্ত্বমতে, ‘খাদ্যবস্তু ও পানীয় ঠাণ্ডা রাখা যায় এক ধরনের গ্যাসের ব্যবহার করে, এতে করে খুব তাড়াতাড়ি খাদ্যবস্তু ও পানীয় ঠাণ্ডা হবে।’ তবে এই তত্ত্বকে খুব একটা কাজে লাগাতে পারেনি তিনি।
তারপর, টমাস মুর ১৮০২ সালে ডেইরি পণ্য ঠাণ্ডা রাখার জন্য এক ধরনের আইস বক্সের আবিষ্কার করেন, নাম দেন রেফ্রিজারেশন। আর এর কয়েক বছরের মধ্যেই টমাস মুর ‘রেফ্রিজারেটর’ নামের কার্যক্রম শুরু করেন।
এরপর, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৩০ সালে অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের পর এই রেফ্রিজারেটর চাহিদা হুট করে বেড়ে যায়। কিন্তু সমাজের সাধারণ জনগণের জন্য এই রেফ্রিজারেটর তখনও সহজলভ্য ছিল না। তখন কেবল উচ্চবিত্তরাই এর সুবিধা ভোগ করত।
আরো পড়ুন:কাকে বিয়ে করলেন দুবাইয়ের রাজকুমারী শাইখা মাহরা
তবে আশার আলো দেখালেন ফ্রেড ডব্লিউ উলফ। তিনি সর্বপ্রথম ১৯১৩ সালে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন। আর এই যে আধুনিক রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ তা মূলত ফ্রেড ডব্লিউ উলফের ১৯১৩ সালের আবিষ্কৃত রেফ্রিজারেটরের একটি উন্নত ভার্সন বৈকি আর কিছুই নয়।
ফ্রেডের তৈরি রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজের হাত ধরেই বিভিন্ন ধরনের ফ্রিজ বাজারে আসতে থাকে। তবে তার মাঝে সবচেয়ে ছোটো ভার্সন হলো চার লিটার পেলটিয়ার আর বড়ো আকারের ফ্রিজের উচ্চতা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের চেয়েও বেশি।
আরও যদি ইতিহাস বলি তবে, ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্টের মিশিগানের ডেট্রয়েটের মিশিগানের নাথানিয়েল বি ওয়েলস এর বৈদ্যুতিক শক্তিতে কাজ করবে এমন একটি রেফ্রিজারেশনের ধারনা; ১৯১৬ সালে আলফ্রেড মেলোয়েস ক্যাবিনেটের নিচে স্থাপন করা একটি কম্প্রেসারযুক্ত রেফ্রিজারেটরের মডেল তৈরির কথা বলতে হয়। মূলত, ১৯১৮ সালে আলফ্রেডের মডেল ধারণা ফ্রিজিডেয়ার কোম্পানি কিনে নিয়েই বাজারজাত শুরু করে ফ্রিজের।