
অনুলিপি ডেস্কঃ অসম্ভব হলেও সত্য , মাথা ছাড়াই একটানা বেঁচে ছিলেন ১৮ মাস। এমনি এক অসম্ভব সত্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৪৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। আমেরিকা বসবাসকারী লয়েড ওলসেন এবং ক্লারা ওলসেন এই দম্পতি মাইক নামের একটি মুরগি পালন করতেন। একদিন খাওয়ার জন্য তাদের পালিত মুরগি জ’বাই করেছিলেন। আর তখনই ঘটে দূর্লভ এক ঘটনা।
মুরগির মাথা কেটে ফেলে ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্ত মুরগির মাথা কেটে ফেলার পর সেটি মারা না গিয়ে দৌড়োতে শুরু করে। মুরগিটিকে এদিক ওদিক দৌড়ানোর পর লয়েড ওলসেন ধরতে সক্ষম হন। মুরগিটিকে ধরে তিনি একটি বাক্সে রেখে দেন। তিনি মনে করেছিলেন হয়ত মুরগিটি জবাই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তিনি যখন পরের দিন মুরগিটিকে দেখতে আসছিলেন, তখন দেখলেন মাইক তার কাটা মাথাটি পাখার নিচে নিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে। তিনি অবাক হলেন।
ঘটনাটি ঘটার পর চারিদিকে খুব হইছই পড়ে যায় এবং আমেরিকার বিভিন্ন শহরে তিনি এই মুরগিটিকে নিয়ে প্রদর্শনী করতেও শুরু করেন। এরকম অদ্ভুত কান্ড দেখে লয়েড সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি মুরগিটিকে বাচাবেন। লয়েড মাইকে(মুরগির নাম) বাঁচাতে তৎপর হয়ে উঠেন। তার মাথায় প্রথম চিন্তা ছিল মাইকের খাওয়ার ব্যবস্থা করা। মুরগিটিকে খাবার খাওয়াতে তিনি একটি চোখের ড্রপারকেই বেছে নিলেন।
চোখের ড্রপারের সাহায্যেই তিনি মাইককে পানি ও দুধের মিশ্রণ খাওয়াতেন। এছাড়া মাঝে মাঝে মাইককে ছোট ছোট যবের দানাও খাওয়াতেন। কিছুদিন বাচার পর মুরগিটি কিভাবে বেচে গেলেন তা জানার জন্য লয়েড মাইককে সঙ্গে নিয়ে ২৫০ মাইল পাড়ি দিয়ে তিনি চলে গেলেন সল্ট লেক সিটির উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষনা করে তারা জানালেন তাৎক্ষণিকভাবে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্তও অবিরাম রক্তক্ষরণে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে মাইককে।
যেহেতু একটি মুরগির রিফ্লেক্স অ্যাকশনের অধিকাংশই তার মস্তিষ্কের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তাই মাইক আসলে পুরোপুরি সুস্থই ছিল। শুধু তার মাথাটাই ছিল না, এটুকুই! তারপর লয়েড ভাবলেন, মাইক কে নিয়ে ত ব্যবসা করলে মন্দ হয় না। এজন্য তিনি মাইক কে সঙ্গে নিয়ে রাস্তা-রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। আর মাইককে দেখার জন্য মানুষ ভিড় করতে লাগল।
নিউ ইয়র্ক, আটলান্টিক সিটি, লস অ্যাঞ্জেলস এবং স্যান ডিয়েগোতে ২৫ সেন্টের টিকিট কেটে দলে দলে মানুষ তাকে দেখতে আসল। সে সময়টায় মাইকের মাসিক আয় ছিল ৪,৫০০ মার্কিন ডলার! বর্তমান বাজারে তার মূল্য ৫০,০০০ ডলারের অধিক। মাইকের তখন ১০,০০০ ডলারের একটি ইন্সুইরেন্স ও করা হয় সে সময়। এছাড়াও মাইকের বিভিন্ন শো ঠিক মতো পরিচালনা করার জন্য একজন ম্যানেজারও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তখন।
আস্তে আস্তে মাইক জনপ্রিয় হতে শুরু করল। তাকে নিয়ে ফিচার করল বিখ্যাত টাইম ও লাইফ ম্যাগাজিন। এছাড়াও গিনেস বুকেও জায়গা করে নিলো মাইক। সে সময় আমেরিকার মানুষজন মাইককে এক নজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়তে লাগল। আর এভাবেই কাটা মাথার মাইককে দিয়ে লয়েডের জীবনই পাল্টে গেল। রাতারাতি বনে গেলেন কোটিপতি। অভাব অনটনের সংসারে এখন অর্থের ছড়াছড়ি। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হলো না।
আরো পড়ুনঃপায়ের আকার বলে দেবে আপনার ব্যক্তিত্ব বা আপনি কেমন মানুষ! মিলিয়ে নিন..
১৯৪৭ সালের মার্চ মাসের দিকে ট্যুর শেষে লয়েড অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের ফিনিক্সে যাত্রাবিরতি নিলেন। আর সেখানেই ঘটল বিপত্তি। হঠাৎ করেই মাঝরাতের দিকে দম বন্ধ হতে লাগল মাইকের। মাইকের এই অবস্থা দেখে লয়েড তার খাদ্যনালি পরিষ্কার করার জন্য ড্রপারটি খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু অনেক খোজাখুজির পরও খুজে পেলেন না। কারন আগের দিনের প্রদর্শনী শেষে ড্রপারটি ভুলে সেখানেই ফেলে এসেছিলেন।
অনেক চেষ্টার পরও মাইককে বাচাতে পারলেন না তিনি। মৃত্যুর পরও মানুষের গল্প আর কল্পকথায় বেঁচে ছিল মাইক। কলোরাডোর ফ্রুটা শহরে গেলে এখনও দেখা মেলে মাথাহীন মাইকের প্রতিচ্ছবির এক মুরগির স্ট্যাচুর। প্রতি বছর মে মাসে মাইকের স্মৃতিতে পালন করা হয় ‘হেডলেস চিকেন ফেস্টিভ্যাল’।
