ফিচারলোকসংস্কৃতি

ঈদুল আজহা: ইতিহাস-ঐতিহ্য, তাৎপর্য ও শিক্ষা!

প্রতিটি জাতি-গোষ্ঠীর কাছে তাদের ধর্মীয় উৎসব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে মনে করা হয়। ধর্মীয় উৎসবের আগমনের দিনটি সেই ধর্মাবলম্বী জাতির প্রত্যেকটি মানুষের জন্য আনন্দ, উৎসব ও সুখের বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। বিশ্বের সকল জাতি-গোষ্ঠী  তাদের নিজ নিজ আনন্দ-উৎসব নির্দিষ্ট দিনে বা তিথিতে পালন করে থাকে। এসব দিন নিজেদের জাতি-গোষ্ঠী-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মের কোনো বিশেষ দিন, উল্লেখযোগ্য কেনো ঘটনা বা কোনো বিশেষ ব্যক্তির জন্ম বা মৃত্যু দিন বা নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নির্ধারিত হয়েছে। এসব বিশেষ দিবসে জাতির ধর্মীয়, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটে। ধর্মীয় উৎসবের মধ্য দিয়ে জাতির একদিকে যেমন আনন্দের ধারা প্রবাহিত হয় তেমনি জাতির নিজ নিজ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, শিক্ষা, তাৎপর্য, মানসিকতা প্রভৃতি মূর্ত হয়ে ওঠে। পৃথিবীর প্রতিটি জাতি বা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবের ও ধর্মীয় দিবসের  সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। সাধারণত উৎসব পালন করা হয় পার্থিব সুখ-সম্ভোগ ভোগের আশায়। কিন্তু কামনা-বাসনা, মোহ, ইচ্ছা ত্যাগ করে একমাত্র নিজ ধর্মের স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যই ধর্মীয় উৎসব-অনুষ্ঠান পালন করা হয়। ঠিক তেমনি মুসলমানদের ঈদ উৎসবেরও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। যা ঐতিহ্যগত, তাৎপর্যপূর্ণ, শিক্ষামূলক। ঈদের তাৎপর্য ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। গতকাল সারাদেশে পালন হয়ে গেল, মুসলিমদের ২য় প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই পোস্টে আমরা, ঈদুল আজহা এর ইতিহাস-ঐতিহ্য, তাৎপর্য ও শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো!

ঈদুল আজহা এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য:

মুসলমানদের জন্য ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা অফুরন্ত খুশির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। বছরে দুবার ঈদ আসে, তাই এ উৎসবে ধনী-গরিব, ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব মুসলমানের জীবনে আনন্দের বন্যা ও খুশির ঝর্ণা হয়ে আসে। ঈদ তাই আমাদের আনন্দের সহযাত্রী, যেই যাত্রায় ছোটো-বড়ো সকলে মিলেমিশে একাকার। আমাদের দেশের অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষদেরও ঈদের আনন্দ স্পর্শ করে। যা অসাম্প্রদায়িকতার বার্তা বয়ে আনে। ত্যাগ, সাম্য, ও সহমর্মিতার বিস্ময়কর এবং অপরূপ আলোকপ্রভায় ঈদের উৎসব আরও আলোকিত হয়।

ঈদ-উল-ফিতর হলো দান করার উৎসব এবং ঈদ-উল-আজহা হলো ত্যাগ করার উৎসব। উভয় উৎসবই আমাদের মনকে প্রভাবিত করে। এ উৎসবে শত্রু-মিত্র, ধনী-গরীবের ভেদাভেদ থাকে না। ঈদের আনন্দ ও খুশি সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। দান ও ত্যাগের মেলবন্ধনে দুই ঈদই রূপ নেয় আনন্দ ও উৎসবে।

পৃথিবীর প্রাচীনতম উৎসবগুলির মধ্যে সমবয়সী উৎসব বলা যায় পবিত্র ঈদ উৎসবকে। শ্রেণিগত দিক থেকে এই শ্রেণির উৎসবের প্রাচীন উদাহরণ হলো ব্যাবিলনিয়ার আকিতু। সে সময় ব্যাবিলনের সকল প্রধান প্রধান মন্দিরেই বার্ষিক ধর্মীয় উৎসব অনুষ্ঠান পালনের রীতি ও প্রচলন ছিল। এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সৃষ্টিকাহিনী গানে গানে বর্ণনা করা হতো। সূর্যদেব মারদুকের মহিমাকীর্তনের বর্ণনার জন্য আয়োজন করা হতো আকিতুতে উৎসব। তবে এ আকিতুতে উৎসব উপলক্ষে ব্যাবিলনিয়ার সকল মানুষ সব কিছু ভুলে আনন্দে মেতে উঠতো। তবে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি ব্যাবিলনিয়ার সম্রাট ইতিহাসখ্যাত আইনবিদ হামুরাবি এক সরকারি আদেশে মারদুককে প্রধান দেবতা বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং ব্যাবিলনের প্রধান বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবের মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল আকিতুকে। ইতিহাসবিদরা বলেছেন সেই হিসেব করেই ঈদ-উল-ফিতর হচ্ছে কনিষ্ঠতম ধর্মীয় উৎসব। এর কারণ হলো মহান এই পবিত্রময় পুণ্য উৎসবটি  উদযাপন শুরু হয়েছিল হিজরি ২য় সালে। অর্থাৎ প্রায় ১৪০০ বছর আগে ঈদ প্রথম পালিত হয়েছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনায় হিজরতের পরেই ঈদুল ফিতর উৎসব পালন শুরু হয়। 

সমগ্র বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মুসলমান পবিত্র মাহে রামজানের শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর এবং জিলহজ মাসের ১০ তারিখে  ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করে থাকে ধর্মীয় বিশ্বাস ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে। মুসলমানদের এ কোরবানির একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য রয়েছে এবং কোবরানির ঈদের রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদের দিনের মাহাত্ম্য, তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি ও মনে-প্রাণে ধারণ করতে হলে এ দিনের উৎপত্তি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে অবশ্যই জানা প্রয়োজন।

আরবি ‘আজহা’ শব্দের অর্থ- ত্যাগ, কোরবানি, স্বীকার, প্রভৃতি। ঈদুল আজহার অর্থ হলো স্রষ্টার কাছে ত্যাগ করা। মূলত ঈদুল আজহা ত্যাগ ও কোরবানির চেতনায় ভাস্বর। আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে এ ধর্মীয় উৎসব রীতি মেনে পালনের প্রথা বহু আগে থেকেই চলে আসছে।

কোরবানির ঈদ উদযাপন শুরু হয় মূলত বিশ্বনবী হয়রত মুহাম্মদ (সা.) এর হিজরতের পরে। মদিনায় এসে তিনি জানতে পারলেন, ‘নওরোজ’ ও ‘মিহিরজান’ নামে দুটি উৎসব প্রতিবছর উদযাপন করে থাকে সেখানকার অধিবাসীরা। কিন্তু এ দুটি উৎসবের সাথে চালচলনগত দিক থেকে, রীতিনীতিতে ইসলামের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির কোনো মিল ছিল না। শ্রেণিবৈষম্য ও ব্যবধান, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ভেদাভেদ, ঐশ্বর্য-অহমিকার পূর্ণ স্বীকৃতি প্রদান করা হতো উভয় উৎসবেই। দুটি উৎসবই ৬ করে করে দিনব্যাপী পালন করা হতো এবং এই ১২ দিন ভাগ করা হতো বিভিন্ন শ্রেণির লোকজনদের মধ্যে। আর এর মধ্যে যেকোনো একটি দিনকে শুধু বিত্তবানদের জন্য নির্ধারণ করা হতো ‘নওরোজ-এর হাসা’ বা ‘নওরোজ-এ বুজুর্র্গ’ হিসেবে। সেদিন নির্দিষ্ট দিনে কোনো হতদরিদ্র বা নিঃস্বের অধিকার থাকত না। শুধু একটি দিনকেই ‘নওরোজ আম্মা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো সাধারণ মানুষের জন্য। কিন্তু বাকি পাঁচটি দিনে হতদরিদ্র বা নিঃস্ব মানুষের উৎসবে অংশগ্রহণের বিন্দুমাত্র কোনো সুযোগ ছিল না, এটি ছিল বিত্তবানদের জন্য। আমির-ওমারাহ ও বিত্তশালী ব্যক্তিরা এই ‘নওরোজ-এ আম্মা’ দিবসটিকে অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখত, কারণ এটি ছিল বিত্তহীনদের জন্য চিহ্নিত দিবস। সাধারণ, দরিদ্র, অসহায় মানুষ ব্যথা-বেদনা ও লাঞ্ছনার মধ্য দিয়ে কোনোক্রমে এ দিবসটি উদযাপন করত ।

কিন্তু ইসলাম হচ্ছে শান্তি ও মিলন, সাম্য, মৈত্রী, প্রেম-প্রীতির ধর্ম। ইসলামে শ্রেণিবৈষম্যের স্বীকৃতি দেয় না। তাই শ্রেণিবৈষম্যনির্ভর উৎসব দুটির বিলুপ্তি ঘটিয়ে মনুষ্য সৃষ্ট কৃত্রিম পার্থক্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ধনী-দরিদ্রের মহামিলনের প্রায়াসের জন্যই মহানবী (সা.) প্রবর্তন করেছিলেন দুটি উৎসব তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী করিম (সা.) মদিনায় আগমনের পর দেখলেন মদিনাবাসীর দুটি উৎসবের দিন রয়েছে, এ দিন তারা খেলাধুলা, আনন্দ ও চিত্তবিনোদন করে। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এ দুটি দিন কি? তারা বলল, জাহেলি যুগে আমরা এই দিনে আনন্দ উৎসব, খেলাধুলা করতাম। রাসুল (সা.) তখন বললেন, আল্লাহ তায়ালা এই দুই দিনের পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন তোমাদের দান করেছেন। একটি হলো ঈদুল ফিতর অপরটি হলো ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ।” এতে করে চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল ‘নওরোজ’ ও ‘মিহিরজান’ উৎসব উদযাপন।

আবার, ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী, আল্লাহ তা’আলা ইসলামের অন্যতম রাসুল হযরত ইব্রাহীম (আ.) কে স্বপ্নযোগে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানি দেবার নির্দেশ দান করেন। স্বপ্নে এমন আদেশ পেয়ে ইব্রাহীম ১০টি উট কোরবানি করলেন। কিন্তু পুনরায় তিনি আবারো একই স্বপ্নাদেশ পেলেন। এরপর ইব্রাহীম এবার ১০০টি উট কোরবানি করেন। এরপরেও তিনি আবারও একই স্বপ্ন দেখে মনে মনে ভাবলেন, আমার কাছে তো এই মুহূর্তে আমার সবচেয়ে প্রিয় হলো প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)। তখন তিনি পুত্র ইসমাইল (আ.) কে কোরবানির উদ্দেশ্যে সকল মানুষ ও প্রস্তুতিসহ আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করার থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা করছিল ও ইব্রাহীম ও তার পরিবারকে প্রলুব্ধ করেছিল এবং সেজন্য ইব্রাহীম শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। আর সেই থেকেই হজ্জের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্ন স্বরূপ নির্মিত ৩টি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।

এরপর আরাফাত পর্বতের উপরে ইব্রাহীম (আ.) তার প্রিয় পুত্রকে কোরবানি দেয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, এবং তখনই  তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তার পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তার প্রিয় পুত্রের কোনো প্রকার ক্ষতি হয়নি। অতঃপর আল্লাহর আদেশ পালনের দ্বারা ইব্রাহীম (আ.) এই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন যা ছিল ছয় সংখ্যক পরীক্ষা। এতে আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে ইব্রাহীম (আ.) কে তার খলিল (বন্ধু) হিসাবে গ্রহণ করেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই সারা বিশ্বের মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর পশু কোরবানির মধ্য দিয়েই এই দিবসটি উদযাপন করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩ দিন ধরে ঈদুল আজহার কোরবানির প্রচলন আছে। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার মাঝে ২ মাস ১০ দিন ব্যবধান থাকে হিজরি চান্দ্র বছরের গণনা অনুসারে। আর দিনের হিসেবে যা সর্বোচ্চ ৭০ দিন হয়ে থাকে। ঈদুল আজহার এই ইতিহাস শুধু মাত্র ঐতিহাসিক ঘটনায় নয় ঐতিহ্যপূর্ণও বটে। এই মহান ত্যাগের সাথে বহু বছরের পুরাতন ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মীয় সংস্কৃতি এগুলো জড়িয়ে আছে।

ঈদুল আজহার তাৎপর্য ও শিক্ষা:

মূলত হজরত ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালনার্থে নিজের প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। তার এই ত্যাগ কোরবানির গুরুত্ব, মহিমা ও তাৎপর্যকে আরও মহিমান্বিত করে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এটি পুণ্যময় ইবাদত বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। 

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের ভেদাভেদ নেই। পার্থক্য রয়েছে শুধু সৎ ও অসৎ, ঈমানদার ও বেঈমানের মধ্যে। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই মূলত তাৎপর্য অনুমেয়। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ উদযাপনের মাধ্যমে শ্রেণিবৈষম্য দূর করে সুনির্মল আনন্দ উপভোগ শুরু হয়। এই উৎসবের ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, সম্প্রীতি, ভালোবাসা, সহমর্মিতা, ত্যাগ ও মিলন। পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম সমাজের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে। ঈদ সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ও একাত্মবোধের মাধ্যমে আনন্দ উপভোগ এবং পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতার সম্প্রসারণের শিক্ষা দেয়। সমাজের হতদরিদ্র, গরীব, অভাবী মানুষও যাতে এই মহানন্দে শামিল হয়ে উৎসব পালন করতে পারে, সেটি ঈদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ধনী-গরীব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ার এই ব্যবস্থায় হলো ঈদ। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক, পরলৌকিক সব ক্ষেত্রেই এর পরিব্যপ্তি। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সামাজিকতা এবং মানবতাবোধকে সমুন্নত করাই ঈদের মূল তাৎপর্য। ঈদের মূল বিষয় হলো সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ। ত্যাগ, দানের দ্বারা বঞ্চিত-নিরন্ন মানুষদের সাহায্য করাও ইবাদতের অংশ। তাই ঈদের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি করা উচিত। সমাজের অভাবী-দুঃখী মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করা, সুখী-স্বাবলম্বী করে তোলা, তাদের কষ্টে সামিল হওয়ার শিক্ষা দেয় ঈদ। 

ঈদুল আজহা: ইতিহাস-ঐতিহ্য, তাৎপর্য ও শিক্ষা!
ইবাদত

  

কোরবানি মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করা। কোরবানি আল্লাহর প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য, প্রেম-ভালোবাসার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী করে। পশু কোরবানির মাধ্যমে নিজের অহম, গর্ব, কলুষতা, পাপ, বিলাসিতাসহ প্রভৃতি কোরবানি দেওয়া বা ত্যাগ করাই কোরবানি ঈদের অন্যতম তাৎপর্য। মনের সব অহমিকার কোরবানিই হলো প্রকৃত কোরবানি শিক্ষা। 

প্রকৃতপক্ষে শুধু পশু কোরবানিতে কোনো সার্থকতা নেই, বরং নিজেদের আমিত্ব, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, অহমিকা-দাম্ভিকতা, কৃপণতা, অবৈধ অর্থলিপ্সা, পরচর্চা-পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতাসহ যাবতীয় মানবীয় পশুত্বের কোরবানি করতে পারলেই কোরবানি সার্থকতা বয়ে আনবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকাল কোরবানিতে প্রতিযোগিতা এসেছে। কে কত বড় পশু কোরবানি করবে, কার পশুর দাম কত বেশি হবে, এসব লোক দেখানো বিষয় হয়ে পড়েছে কোরবানির উদ্দেশ্য। যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্বের মুসলমানরা এ দিনে পশু কোরবানি মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করে আসছে। তাই লোক দেখানো পশু কোরবানির পরিবর্তে মানুষের উচিত কোরবানি আসল উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করা।

আরও পড়ুন:

পরিশেষে বলা যায় যে, ঈদুল আজহা মানুষকে ত্যাগের শিক্ষা দেয়। এই ত্যাগ মনের দাম্ভিকতার ত্যাগ, নিজের আমিত্বের ত্যাগ। ঈদুল আজহা বিশ্বের জন্য কল্যাণ ও শান্তির বার্তা বয়ে আনে। খুশির এই উৎসব মাধ্যমে ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত হওয়া উচিত। 

 

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।