জাতীয়সন্দেশ

রাতে ঢালাই করার পর সকালেই উঠে গেল সড়কের পিচ!

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে রাতে ঢালাই করার পর সকালেই পিচ উঠে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাথানডাঙ্গা-সাতাশিয়া সড়কে রাতে ঢালাই করা হয় সড়কের পিচ। কিন্তু পরদিন সকালেই জুতার ঘষায় তা উঠে যায়। এমন অভিযোগই এসেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৮১৩ টাকা ব্যয়ে উপজেলার বাথানডাঙ্গা-সাতাশিয়ার ১.১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক প্রশস্তের কাযে হাত দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেকেই-বিএসিকে (জেভি)। পরবর্তীতে তাদের কাছ থেকে কাজটি নেয় স্থানীয় ঠিকাদার অ্যাডভোকেট রাজিব।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার বাথানডাঙ্গা এলাকায় সড়কটির পিচ ঢালাই দেওয়া হয়। আর সকালেই সাধারণ মানুষের পায়ের জুতার ঘষায় কার্পেটিং উঠে যেতে দেখা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদার রাতের অন্ধকারে নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। আর এ কারণেই হাত দিয়ে টান দিলে বা পা দিয়ে ঘষা দিলেই ঢালাই উঠে যাচ্ছে। ২.৫ সেন্টিমিটার কার্পেটিং করার কথা থাকলেও কিছু কিছু স্থানে ৫ থেকে ৭ মিলিমিটার কার্পেটিং করা হয়েছে। এতে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। 

বাথানডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, স্থানীয়দের বাঁধা উপেক্ষা করে ঠিকাদারের লোকজন রাত ৮টা থেকে ৩টা পর্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তড়িঘড়ি করে রাস্তার কাজ শেষ করেছেন। সকালেই তা পায়ের জুতার ঘষায় উঠে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো জায়গায় একেবারেই পিচ দেয়নি বললেও চলে। এ ছাড়াও রাস্তার কার্পেটিংয়ের কাজে পুরুত্ব ২.৫ সেন্টিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও কোনো কোনো স্থানে মাত্র ৫-৭ মিলিমিটার দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে একই এলাকার আহম্মেদ আলী বলেন, রাতের আঁধারে কাজ করবে এটা দেখে আমরা এলাকাবাসী বাধা দিয়েছিলাম। পরে ঠিকাদারের লোকজন প্রকৌশলীকে এনে কাজ শুরু করে। পরদিন সকলে জুতার ঘষায় তা উঠে যেতে দেখা যায়। যে রাস্তা করেছে তাতে একমাসও টিকবে না। 

আরও পড়ুন# বগুড়ায় ১২ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ!

এ বিষয়ে উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আলী অনুলিপিকে বলেন, গত ৫ সেপ্টেম্বর  সন্ধ্যার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই ঠিকাদারের লোকজন নির্মাণসামগ্রী নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। এ সময় স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে তাদের কাজ করতে নিষেধ করি। এলাকাবাসীও কাজে বাঁধা দেন। এতে ঠিকাদারের লোকজন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ও ভয়ভীতি দেখায়। পরে এলাকাবাসী পানি-কাদার মধ্যে কাজ করার বিষয়টি ইউএনও ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবহিত করেন। পরে বাধ্য হয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারের কর্মচারীরা। বিটুমিন মিশ্রিত নির্মাণসামগ্রী নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বিবেচনা করে নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে ঠিকাদারের নিজ দায়িত্বে তাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।  এরপর ঠিকাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছামতো কাজ করেছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নুরু শিকদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সামান্য একটু কাজ বাকি ছিল, সেইটুকু ওইদিনই শেষ করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু লোক বাঁধা দিলে পরে নির্বাহী প্রকৌশলী মহোদয়ের সহযোগিতায় অফিস থেকে লোক পাঠিয়ে কাজ করা হয়েছে। রাস্তা নির্মাণের কাজে কোনো ত্রুটি থাকলে পরে তা ঠিক করে দেওয়া হবে।

কাশিয়ানী উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মোরশেদুল হাসান রাতে কাজ করার কথা স্বীকার করে বলেন, কাজ চলমান আছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পরবর্তীতে তা ঠিক করে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।