ঘুম এর আগে আমল ও ফজিলত
ক্লান্তি-অবসাদ দূর করে একটি মানুষের ঘুম দিনকে জীবিকা অর্জনের জন্য আর রাতের অন্ধকারকে মানুষের ঘুমের জন্য আচ্ছাদন হিসেবে তৈরি করেছেন বলে কুরআনুল কারিমের সুরা নাবায় ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ বলেছেন,তোমাদের নিদ্রাকে করেছি— ক্লান্তি দূরকারী।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ০৯) মানুষের শরীর সুস্থ রাখতে ঘুমের অবদান অনেক। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামত। মহৎ ইবাদতও বটে। মুমিনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। তবে তা হতে হবে ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতি ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক। ঘুম তার ব্যতিক্রম নয়। যদি কোনো ব্যক্তি ইসলামের নির্দেশিত পদ্ধতিতে ঘুমায়, তার ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়।
মানুষের এ ঘুম মৃত্যুর ন্যায়। ঘুমালে মানুষের জাগতিক চিন্তা চেতনা বা কোনো উপলব্ধি থাকে না। তাই ঘুমের সময় যাতে মানুষের কোনো বিশাল ক্ষতি বা পেরেশানি না হয় সেজন্য রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বিশ্বনবি বেশকিছু আমল করতেন। যাতে ঘুম নিরাপদ ও প্রশান্তিদায়ক হয়।
এখানে ঘুমানোর আগের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল দেওয়া হলো— ১.ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুম যাওয়া। হাদিস শরিফে ঘুমানোর আগে অনেক দোয়া বর্ণিত রয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেন তোমরা সব দোয়া না পারলেও এই দোয়াটি পড়। ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহ্ইয়া’, অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি শয়ন করছি এবং তোমারই দয়ায় আমি পুনর্জাগ্রত হব।’ রাসূল (সা) আরো বলেন,‘যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে।’
২.তাসবিহের আমল করা>আল্লাহর রাসুল (সা.) তার মেয়ে ও জামাতা ফতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)- কে বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেবো না যা তোমাদের জন্য খাদেম অপেক্ষাও উত্তম হবে? যখন তোমরা তোমাদের বিছানায় যাবে, তখন তোমরা (৩৩) বার সুবহানাল্লাহ, (৩৩) বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং (৩৪) বার আল্লাহু আকবার বলবে; তা খাদেম অপেক্ষাও তোমাদের জন্য উত্তম হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭০৫)
৩.সুরা মুলক পড়া>রাসুল (সা.) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো সুরা মুলক (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১) আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রতি রাতে নবী (সা.) বিছানায় যাওয়ার আগে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুহাত একত্র করে তাতে ফুঁক দিতেন এবং যত দূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বোলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের ওপর হাত বোলাতেন।
তিনি এভাবে তিনবার করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিন শাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শা’ আল্লাহ।এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা সুরা মুলক তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। (সুনানে আন-নাসায়ী)
৪.‘কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ’ পাঠ>একবার আল্লাহর রাসুল (সা.) তার সাহাবাদের বললেন, ‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কোরআন পড়তে অসমর্থ হবে?’ এতে সকলকে বিষয়টি ভারী মনে করল। বলল, এই কাজ আমাদের মধ্যে কে পারবে— হে আল্লাহর রাসুল ? তখন তিনি বললেন, ‘সুরা ইখলাস হলো- এক-তৃতীয়াংশ কোরআন। (বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)
আরো পড়ুন: রাসূল (সা.) কে স্বপ্নে দেখার সঠিক আমল
৫.সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া>আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন, তখন তার ডান হাত— তার গালের নীচে রাখতেন, তারপর এ দোয়াটি বলতেন—
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺑِﺎﺳْﻤِﻚَ ﺃَﻣُﻮﺕُ ﻭَﺃَﺣْﻴَﺎ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমু-তু ওয়া আহ্ইয়া
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনার নাম নিয়েই আমি মরছি (ঘুমাচ্ছি) এবং আপনার নাম নিয়েই জীবিত হব। (বুখারি, হাদিস : ৬৩২৪)
মুসলমানের উচিত, প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত আমল গুলো মেনে জীবন পরিচালিত করা। রাতের যাবতীয় পাপাচার থেকে হেফাযতে থাকা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলগুলো নিজেদের নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। (আমিন)
বাংলাদেশেসহ বিশ্বের সকল খবর সবার আগে জানতে অনুলিপির সাথেই থাকুন।