মোবাইলে ছবি তোলা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।
ডিজিটাল এই জোগে আমরা অনেকেই মোবালে অনেক ছ,বি তোলে থাকি আজ আমরা জানবো মোবাইলে ছ,বি তোলা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে।
![](https://anolipi.com/wp-content/uploads/2023/04/ছবি-তোলা-780x470.jpg)
মোবাইলে ছবি তোলা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে। অনুলিপি ডেস্কঃ প্রযুক্তি মানুষের উপকার করে, প্রযুক্তি মানুষের ক্ষতি করে। যেমন আগুন মানুষের উপকার করে, আগুন মানুষের ক্ষতি করে। এর উপকার-অপকার নির্ভর করে আমাদের ব্যবহারের উপর। আমরা ইচ্ছে করলে এগুলোকে কল্যাণে ব্যবহার করে কল্যাণ লাভ করতে পারি। আর আমরা যদি এগুলোর ব্যবহার করি মন্দ পথে তাহলে তা অকল্যাণ বয়ে আনবে বৈকি। মোবাইলও তেমন একটি যন্ত্র। আগের দিনে যারা দ্বীনদার তাদের জীবনে হয়ত একটা দুইটা প্রয়োজনীয় ছবি থাকত। কারো হয়ত জীবনে একটি ছবিও থাকত না। পর্দানশীন নারীদের ছ,বি তো দূরের কথা তাদের ছায়াও কেউ দেখত না। তাঁরা স্বেচ্ছায় নিজেদের ছ,বি তো তুলতেনই না। এধরনের পরিবেশ থেকেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতেন। এটা বেশিদিন আগের কথা নয়।
মোবাইলে যেদিন থেকে ক্যামেরা যুক্ত হল এবং ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল সহজলভ্য হতে থাকল, তখন থেকেই এ বিষয়ে শিথিলতা দেখা দিল। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ছ,বি তোলা শুরু হল। দ্বীনদার-সাধারণ সকলের মাঝেই এ প্রবণতা ছড়িয়ে পড়ল। প্রথম প্রথম দ্বীনদার শ্রেণী একটু বিরত থাকল। (আলহামদু লিল্লাহ, এখনও এমন দ্বীনদার মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়, যারা ছ,বির ব্যাপারে পূর্ণ সতর্ক।) তারপর আসেত্ম আসেত্ম ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল যত ব্যাপক হল, কিছু দ্বীনদার মানুষের মাঝেও এ বিষয়ে শিথিলতা তত বাড়তে থাকল।
মোবাইলে ছবি তোলা জায়েয নাজায়েয সে প্রসঙ্গে আমি যেতে চাই না। আমি শুধু দ্বীনদারশ্রেণী, বিশেষ করে দ্বীনদার পর্দানশীন নারীদের এর ক্ষতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।
আসলে ক্যামেরার মাধ্যমে যে ছবিগুলো তোলা হয়ে থাকে, সেগুলো অনেকটাই ইমেজ এবং এই ইমেজগুলোতে সুস্পষ্টভাবে কোনো প্রতিকৃতি অথবা পরিপূর্ণ আকার ধারণ করা হয় না। ক্যামেরায় এমন একটি ছবি আসে, যেখানে তেমন কিছুই থাকে না। রাসুল (সা.) যেখানে ছ,বির কথা হারাম করেছেন, সেখানে কি তিনি এই ছবির কথা বলেছেন, নাকি একজন মানুষের মূর্তি আবিষ্কার করা বা পরিপূর্ণ ছবি ধারণ করা সেটা বুঝিয়েছেন? এই নিয়ে পরবর্তী যুগের আলেম বা এই যুগের আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। মূল কথা হচ্ছে, ক্যামেরার যে ইমেজগুলো আছে, রাসুল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা সেগুলোকে বোঝানো হয়নি। তাই এই ইমেজ যদি কেউ ধারণ করে থাকেন, সেটাকে যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি ছবির আকার না দেবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ধারণ করা জায়েজ, নাজায়েজ নয়। ক্যামেরার মাধ্যমে এটি করতে পারেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আলেমদের একটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। এটি ইশতেহাদি বিষয়, সেটি হচ্ছে, সুস্পষ্ট কোনো দলিলের মাধ্যমে বা রাসুলের (সা.) কোনো সুস্পষ্ট হাদিসের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়নি, সেটি হল: অপ্রয়োজনীয়, অহেতুক কারণে বারবার ছবি তোলা বা ছবির কাজেই লিপ্ত থাকা। অনেক সময়ই দেখা যায় যে, হজ করার সময় আল্লাহর ঘরে তাওয়াফ করছেন, তখন তিনি ছবি তুলছেন। অথচ তাওয়াফের ইবাদত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, ইবাদত কবুলের সময়, তখন আপনি ছবি তুলবেন কেন! তাই প্রয়োজন যদি না থাকে, সেক্ষেত্রে ছবি না তুলে, প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করা আপনার জন্য উত্তম। প্রয়োজনীয় সময়ে ছবি তোলা বৈধ, এটি জায়েজ, আপনি ছবি তুলতে পারেন। এটি রাসুল (সা.) যে নিষেধ করেছেন, তার আওতাভুক্ত হবে না।
ইসলামের মৌলিক বিধান হচ্ছে, জড়বস্তুর ছবি তোলা ও আঁকায় শরয়ী কোন বিধিনিষেধ নেই। আর প্রাণীর ছবি প্রয়োজন ছাড়া তোলা, সংরক্ষণ করা, প্রকাশ করা, ব্যবহার করা হারাম। তবে শরীয়তে ছবি বলতে কী বোঝায়, এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিশ্লেষণ রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তোলা, কম্পিউটার ও মোবাইলে সংরক্ষিত ছবিও ‘নিষিদ্ধ ছবি’র অন্তর্ভুক্ত বিধায় এটিও হারাম। তবে কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের মতে তা জায়েয। কিন্তু এটিও যে অনুত্তম এতে কারো কোন দ্বিমত নেই। অতএব, স্পষ্ট বিধানের ওপর আমল করাই আমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ ও তার রাসূল ﷺ-এর হুকুম অনুসরণ করার ক্ষেত্রে যত বেশি কঠোরতা অবলম্বন করা যায়, ততই তাকওয়ার জন্য অধিক সহায়ক। আপনি মোবাইলে ছবি (অবৈধ ও অশ্লীল কিংবা যাকে দেখা নাজায়েয তেমন মানুষের ছবি ছাড়া) তুলে রাখলে, কাগজে প্রিন্ট না দিলে, আপলোডও না করলে আপনার সাধারণ ছবি তোলার সমান গুনাহ নাও হতে পারে। তবে এটাও যদি বর্জন করা যায় তাহলে এটা হবে আপনার তাকওয়ার আলামত।
১.স্বামীর মোবাইলে স্ত্রীর ছবি > অনেকেই মোবাইলে নিজের স্ত্রীর ছবি তুলে রাখেন। অন্যদের মত তা হয়ত মোবাইলের স্ক্রিনে দিয়ে রাখেন না, কিন্তু ছবির ফোল্ডারে তো তা থাকেই। ফলে নিজের বন্ধু বা ভাই যখন মোবাইল ধরে তো স্ত্রীর ছবি দেখে ফেলে। অথচ এই নারী পর্দানশীন। কখনো পরপুরুষের সামনে নিজের চেহারা খোলেন না। পর্দার অন্যান্য অনুষঙ্গও যথাযথ মেনে চলেন। কিন্তু এই একটি শিথিলতার জন্য পর্দার একটি বড় রোকন নষ্ট হয়। সুতরাং এ বিষয়ে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সতর্ক হতে হবে এবং পরস্পর সহযোগিতা করতে হবে। একজনের মাঝে শিথিলতা দেখা দিলে অপরজন তা শুধরে দিবে ও সতর্ক করবে। ২.বিবাহের সময় ছবি তোলা > আগের দিনে যারা দ্বীনদার নন, তারা বিবাহ-অনুষ্ঠানে ক্যামেরা ভাড়া করে আনত। আর যারা দ্বীনদার তারা এসকল অনুষ্ঠানে বা সাধারণ অবস্থায় ছবি তোলার চিন্তাই করত না। কারো কাছে ক্যামেরা থাকলেও ছবি তুলতে সাহস করত না, বা তুলতে গেলে যার ছবি তোলা হচ্ছে সে নিজেই বাধা দিত। কেউ কোনোভাবে তুললে তাও নষ্ট করে ফেলা হত। কিন্তু মোবাইল ব্যাপক হওয়াতে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, যারা দ্বীনদার তাদেরও অনেকে ছবি তোলাকে একেবারে স্বাভাবিক মনে করছেন। তবে এখনো আল্লাহর অনেক বান্দা আছেন যারা এবিষয়ে পূর্ণ সতর্ক থাকছেন।
আরো পড়ুন: তারাবির নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে কি?
বিবাহের অনুষ্ঠানে কখনো বর নিজেই নিজের মোবাইলে বউয়ের ছবি তুলতে থাকে। এটা কোনো কোনো দ্বীনদার লোকের মাঝেও দেখা যায়। আর কখনো বর বা কনের পরিবারের লোকজন বা বউ দেখতে আসা মেহমান তাদের নিজ নিজ মোবাইলে ছবি তুলতে থাকে। এমনকি পর্দানশীন পরিবারে যেখানে কনের কাছে কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ পৌঁছতে পারে না, সেখানেও মেয়েরা ছবি তোলার কারণে অন্যান্য পুরুষ এই পর্দানশীন কনেকে দেখে ফেলে। আর যেহেতু কোনো পুরুষ ছবি তুলছে না, তাই কনেও নিষেধ করে না বা অন্য কেউ বাধা দেয় না। ফলশ্রুতিতে কী হয়? পর্দা নষ্ট হয় এবং পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে চলার পরেও মেয়েটিকে সবাই দেখে ফেলে। অনেক সময় পর্দানশীন মেয়েটি না চাইলেও তার করার কিছু থাকে না। সুতরাং এক্ষেত্রে সবার আগে সতর্ক হতে হবে স্বামীকে। সাথে সাথে স্ত্রীকেও সাবধান থাকতে হবে যে, কেউ যেন তার ছবি তুলতে না পারে। প্রয়োজনে মুরববীদের সহায়তা নিতে হবে। আর আমাদেরও মানসিকতার সংশোধন করতে হবে; নতুন বউ দেখার প্রবণতা ছাড়তে হবে। তাহলে আমাদের ও নতুন বউয়ের সবারই আল্লাহর হুকুম মানা সহজ হবে এবং আমরা হব দ্বীনদারীতে পরস্পর সহযোগী।
৩. নতুন পোষাক পরে ছবি তোলা > অনেক সময় মেয়েরা নতুন পোষাকের আনন্দে মোবাইলে ছবি তোলে। পর্ব-উৎসবে বা এমনি কেউ হয়তো নতুন জামা পরেছে, তো আত্মীয় স্বজনের কেউ বলেন, দাঁড়াও তো তোমার একটা ছবি তুলি বা পাশের বাসার ভাবী বলছেন, বাহ্! ভাবী, আপনাকে তো খুব সুন্দর লাগছে! দাঁড়ান একটা ছবি তুলি। এভাবে আনন্দের আবহে ছবি তোলা হয়ে যায়। এরপর কখনো কখনো তা গায়রে মাহরাম পুরুষেরও চোখে পড়ে, আর পর্দা নষ্ট হয়। এছাড়া আরো কিছু ক্ষেত্র আছে যেখানে ছবি তোলার বিষয়ে বা পর্দার অন্যান্য বিষয়ে শিথিলতা হয়ে যায়। সতর্ক হলে আমরা নিজেরা তা থেকে বাঁচার পথ বের করতে পারব। আল্লাহ আমাদের তাকওয়া ও খোদাভীতি দান করুন এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তাওফীক দান করুন। দ্বীনদারীতে পরস্পর সহযোগিতার মানসিকতা দান করুন। আল্লাহ বলেছেন, (তরজমা) ‘সৎকাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর এবং পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’-সূরা মায়িদা ৫:২