ব্যবসা-বাণিজ্য

অনলাইন জুয়ায় কোটি টাকা আত্মসাৎ!

গ্রেফতার ৩

অনলাইন তথা ভার্চুয়াল মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে একটি চক্র। সম্প্রতি এই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতারকৃত প্রতারকরা হলেন- মো. সাদ্দাম হোসেন মিজি, সহিদুল ইসলাম আলমগীর ও মো. আলমগীর খান।

এডিসি মো. নাজমুল হক জানান, শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে তাদের কাছ থেকে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন ও ৭টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আরও জানান, প্রতারকরা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এই দুটির গঠন প্রণালীতে প্রথমে রয়েছে সুপার এডমিন, তারপর পর্যায়ক্রমে ম্যানেজার, ভিআইপি অ্যাজেন্ট এবং সর্বশেষে ইউজার।

প্রতারকদের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, মূলত সুপার এডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশ কিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজাররা কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে সেখানে একজন অ্যাজেন্টকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে থাকেন। অ্যাজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহে সহায়তা ও বিভিন্ন সমস্যা হলে সরাসরি ম্যানেজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের কাজ করে। তারা সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং তথা পিরামিড সিস্টেমে কমিশন পেয়ে থাকেন।

আরও পড়ুন: ১১ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক ক্যাসিনো দেলু!

তিনি আরও জানান, অ্যাজেন্টরা ২ থেকে ১০ শতাংশ হারে রেফারেল কমিশন পেত। এছাড়াও একজন নতুন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খুলতে ৩ হাজার ২০০ টাকা নিত। নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার পর তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ডিপোজিট বা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হতো। তিন দিন থেকে ৪৫ দিনের বিনিয়োগে ২ দশকিম ৭ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রতিদিন মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। বেশি মুনাফায় আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহক বা ইউজাররা বিনিয়োগ করতেন। নতুন সদস্যদের ৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার ডিপোটিজট বা বিনিয়োগে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৭৭ টাকা পর্যন্ত আপলাইন গ্রাহককে কমিশনের অফার করতেন। তাছাড়াও নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করতো।

এই গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, সাদ্দাম হোসেন অ্যাজেন্ট এবং সহিদুল ও আলমগীর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। গ্রেফতার সাদ্দাম বিভিন্ন এলাকায় থেকে ইউজার সংগ্রহ করে মোবাইল অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করতেন। বিনিময়ে তিনি মোটা অংকের একটি কমিশন পেতেন। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় বিদেশে পাচার হতো। যার প্রভাব পড়ে দেশের সামগ্রিক রেমিটেন্স খাতের ওপর। তারা নিজেদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কথা বার্তা ও যোগাযোগের জন্য P.S.G. MD SADDAM MIZI নামের প্রাইভেট টেলিগ্রাম গ্রুপ ব্যবহার করতেন।

তিনি আরও যোগ করেন, আসামিদের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন ও লেনদেনকৃত টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে গ্রেফতার আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন: নিজেরাই আত্মসাৎ করল যমুনা ব্যাংকের সাড়ে ১১ কোটি টাকা!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।