স্বাস্থ্য ও লাইফস্টাইল

পছন্দের সকল খাবার খেয়ে কিভাবে ডায়েট করবেন!

পছন্দের সকল খাবার খেয়ে কিভাবে ডায়েট করবেন! ডায়েট শব্দটা আসলেই মাথায় আসে পছন্দের এবং লোভনীয় সব খাবার বাদ। সেই সাথে শক্ত কিছু ব্যায়াম। ওজন কমানোটা এত ভারি ভারি ব্যায়াম আর পছন্দের খাবার বাদ দেওয়াতে হয়ে ওঠে বেশ কষ্টের।

কিছুদিন মানলেও এসব নিয়ম পরবর্তীতে যেন আর মানা হয়ে ওঠে না। তবে, শুধুমাত্র খাবারের পরিমাণের ওপর নজর দিলেই ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রিত এবং স্বাস্থ্য থাকবে ভালো। তাহলে চলুন আজকে জেনে নেই—পছন্দের সব খাবার খেয়েও যেভাবে ডায়েট করবেন! কীভাবে দূরে রাখবেন বিভিন্ন রোগ ও অসুখ!

খাবারে ক্যালরি ব্যালেন্স করুন: পছন্দের সকল খাবার খেতে চাইলে প্রথমেই আপনাকে খাবারের ক্যালরি ব্যালেন্স করা শিখতে হবে। সহজ ভাষায় বললে, আপনার বয়স ও শরীরের ধরণ অনুযায়ী দেখুন প্রতিদিন আপনার শরীর স্বাভাবিক থাকতে কত ক্যালরি প্রয়োজন! এবং সেই অনুযায়ী চার্ট করুন।

ধরুন, আপনি দুপুরে খুব ভারি এবং যথেষ্ট ক্যালিরির খাবার খেয়েছেন, এবার রাতে ও সকালে চেষ্টা করুন কম ক্যালরি গ্রহণ করতে। আর এই সব ক্যালরির যোগফল করে দেখুন আপনার প্রয়োজনীয় ক্যালরি হয়েছে কিনা। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহন করা বর্জন করুন। তবে ভারসাম্য রক্ষা করে ক্যালরি গ্রহণ করতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন, এতে আরও সহজ হয়ে যাবে। তখন তার দেওয়া তালিকা ফলো করলেই আপনার আলাদা ঝক্কি পোহাতে হবে না।

ঘরে তৈরি খাবার খান: আপনার পছন্দের খাবারগুলো ঘরে তৈরি করে খাবার চেষ্টা করুন। বাইরের খাবার কিনে না খাওয়াই আপনাকে সুস্বাস্থ্য ও ক্যালরির ভারসাম্য ঠিক রাখতে সহায়তা করবে। কারণ বাইরের খাবারে অস্বাস্থ্যকর তেল, আকর্ষণীয় রঙ করার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক রঙ, টেস্টিংসল্টসহ স্বাদ বর্ধনকারী উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু, আপনি বাসায় খাবার তৈরি করলে তা হবে ভেজালমুক্ত ও কিছুটা কম ক্যালরির।

প্রতিদিন ব্যায়াম করুন: অনেকেই মনে করে ডায়েট করা মানেই প্রচুর ব্যায়াম করতে হবে। আসলে বিষয়টা তেমন নয়। আপনি প্রতিদিন কত ক্যালরি গ্রহণ করছেন তার ওপর নির্ভর করে ব্যায়াম করতে হবে। ধরুন, একদিন বেশি ক্যালরি গ্রহণ করছেন, তো ওইদিন একটু বেশি সময় নিয়ে ব্যায়াম করুন। আর ব্যায়াম মানেই অনেক শক্ত ও কঠিন কিছু না। যদি অন্য ব্যায়ামগুলো আপনার কঠিন লাগে তবে প্রতিদিন কিছুটা সময় হাঁটুন বা দৌঁড়ান।

সময় বুঝে খান পছন্দের খাবার: অনেক রোগের জন্য অনেকেই ধারনা করেন বেশ কিছু নির্দিষ্ট খাবার একেবারেই খাওয়া যাবে না। কিন্তু, আপনি কোনো খাবার কতটুকু খাবেন বা গ্রহণ করবেন তার ওপরই মূলত নির্ভর কিরে আপনার রোগ কতটুকু নিয়ন্ত্রিত৷ যেমন: ডায়াবেটিস রোগীরের মিষ্টি খেতে বারণ করা হয়, হার্টের রোগীদের গরুর মাংস, ইত্যাদি। তো ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তে সুগারের মাত্রা বিচার করে মিষ্টি খান, তবে অবশ্যই পরিমিত। আবার, হার্টের রোগীরা গরুর মাংস খান মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে। এতে আপনার পছন্দের খাবারের স্বাদও নিতে পারবেন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

রান্নার পদ্ধতি পরিবর্তন করুন: যদি আপনি খুব বেশি তেল মশলা দিয়ে রান্না করে থাকেন, তবে আজই তা পরিবর্তন করুন। রান্নার পদ্ধতির জন্যও অনেক অস্বাস্থ্যকর খাবার স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। যেমন: ডুবো তেলে কোনো খাবার না ভেজে তা অল্প তেলে শ্যালো ফ্রাই বা গ্রিল করে খেতে পারেন।

মাছ মাংস বা সবজি জাতীয় খাবারে অল্প তেল কিংবা তেল না দিয়ে অনেক রান্নার পদ্ধতি আছে, সেগুলো শিখে নিতে পারেন। আর এখনো বাজারে অনেক এয়ারফ্রায়ার পাওয়া যায়, যার সাহায্যে খুব সহজে কম তেলে রান্না করা যায়। মাংস রান্নার ক্ষেত্রে বিশেষ করে লাল মাংস, আগে ১০-১৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে পারেন।

এরপর ভালো করে পানি ঝরিয়ে রান্না করতে পারেন। এতে করে মাংসের চর্বি অনেকটাই কেটে যাবে। আর মাংসে চেষ্টা করুন বিভিন্ন সবজি বা ভিনেগার, লেবু, টকদই সহযোগে রান্না করতে। মাছ হলুদ লবণ দিয়ে আগে তেলে না ভেজে, কাঁচা মাছ ভিনেগার বা লেবুর রস দিয়ে মেখে রাখুন। পরে কম তেলে কষিয়ে রান্না করুন। এছাড়াও সবজি বা শাক অতিরিক্ত সময় নিয়ে রান্না না করে মোটামুটি সেদ্ধ অবস্থায় খান। যেসব সবজি বা শাক সালাদ হিসাবে কাঁচা খাওয়া যায় তা কাঁচা খাবার অভ্যাস গড়ুন। মোট কথা কম তেলে কম মশলায় রান্না করুন।

আরো পড়ুন: গরমের ত্বকে ভাল রাখতে যে ৫ জাতের ফল খাবেন

পরিমাণ মেপে খাবার খান: বাঙালির এক প্রচলিত কথা আছে—’আজ কবজি ডুবিয়ে খেয়েছি’। ডায়েট মেনে চললে, নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে চাইলে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া যাবে না। খেতে হবে মাত্রা রেখে। খাবারটি আপনার যতই পছন্দ হোক, চেষ্টা করুন পরিমাণমতো খেতে। এক্ষেত্রে আপনার পছন্দের খাবার খাওয়ার আগে একমুঠো বাদাম বা এক বাটি সালাদ খেতে পারেন। পরে যখন পছন্দের খাবারটি খাবার তখন আপনার পেট কিছুটা ভরা থাকায় কম খেতে পারবেন। সাথে আপনার মনের তৃপ্তিও মিলবে।

প্রিয় পাঠক, আপনার সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রতিদিন খাবার তালিকায় গাজর, ওটস, বাদাম, গ্রীন টি, শসা, ইত্যাদি রাখতে পারেন। এছাড়া ভাত, রুটি, আলু জাতীয় খাবার খান পরিমিত। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ, একটি ডিম ও সিজন্যাল ফ্রুট খেতে পারেন, তবে ক্যালরি হিসাব করে খাবেন। বাসায় নিজের চার্ট তৈরিতে ঝামেলা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন, তার দেওয়া চার্ট ফলো করুন। আর আমাদের এই লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং এই ধরণের লেখা পেতে অনুলিপির সাথে থাকুন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।