প্রযুক্তিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

গেমিং এর জন্য কোন প্রসেসর ভালো মিডিয়াটেক নাকি স্ন্যাপড্রাগন?

গেমিং এর জন্য কোন প্রসেসরটি সেরা? একজন গেমার মোবাইল ক্রয়ের পূর্বে এই প্রশ্নটি ভেবেই থাকে। অনেক গেমারদের মতে গেমিং এক্সপেরিয়েন্স যত ভালো ও স্মুথ হয় গেম খেলার মজাটাও ততটা বেড়ে উঠে। তাই যেই প্রসেসর ভালো স্পীড ও এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে সেই প্রসেসরযুক্ত মোবাইল বাজারে বেশি বিক্রি হয়। তাই একজন নতুন গেমারকে গেমিং এর জন্য বেস্ট প্রসেসর কোনটা তা জেনে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সব মডেলের প্রসেসর আপনাকে মোবাইলে একটি অতুলনীয় গেমিং এক্সপেরিয়েন্স দিতে পারে না। এর পেছনে অনেক কারণও রয়েছে বটে। আপনার ফোনে গেম কতটা স্মুথ রান করবে তা আপনার প্রসেসর নির্ধারণ করে। আপনার ফোনের প্রসেসর যদি হাই গ্রাফিক্স যুক্ত গেম রান করাতে না পারে তাহলে ধরে নিবেন আপনার ফোনের প্রসেসর আপনাকে গেমিং এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে মোবাইল মার্কেটের উঠতি প্রতিযোগিতার কারণে বেশ ফমোবাইল কোম্পানির দাবি থাকে যে তাদের ফোন গেমারদের একটি অতুলনীয় গেমিং এক্সপেরিয়েন্স দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে বেশ মোবাইলে দেখা যায় যে সেগুলোতে ২ জিবি র‍্যামের গেমসগুলোও ল্যাগ করে। তাই মোবাইলের প্রসেসর কীভাবে আপনাকে একটি ভালো এক্সপেরিয়েন্স দিয়ে থাকে তা আপনাকে জানতে হবে।

একটি স্মার্টফোনের অনেক কম্পোনেন্ট যুক্ত থাকে। অনেকগুলো কম্পোনেন্ট ওর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হলো তাতে যুক্ত থাকা প্রসেসর। কারিণ আপনার মোবাইল এর সকল প্রসেসিং করে থাকে তাতে থাকা প্রসে,সর। আপনার ফোনের কাজ করার গতী সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্ভর করে আপনার ফোনে থাকা একটি ছোট প্রসেসর এর উপর। আপনি যদি আপনার মোবাইল থেকে ভালো স্পীড ও অধিক প্রসেসিং ক্ষমতা আশা করেন তাহলে অবশ্য আপনাকে একটি ভালো কোম্পানির প্রসেসরযুক্ত মোবাইল ক্রয় করতে হবে। আপনি উন্নত মানের প্রসে,সর পাবেন স্ন্যাপড্রাগন, কিরিন, এক্সাইনোস, মিডিয়াটেক ইত্যাদি ব্র‍্যান্ডেগুলো থেকে। এগুলোর মধ্যে কোনো প্রসেসর গেমিং এর জন্য ভালো আবার কোনো প্রসেসর এডিটিং ও অন্যান্য টাস্ক পার্ফোর্ম করার জন্য ভালো। তবে আজকের এই আর্টিকেলে আমর শুধু উন্নত মানের প্রসে,সর গুলো সম্পর্কে জানবো না, বরং কোন প্রসেসরযুক্ত মোবাইলগুলী ক্রয় থেকে বিরত থাকতে হবে সেই সম্পর্কেও জানবো।

বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র‍্যান্ড বিভিন্ন প্রসে,সর ব্যবহার করে থাকে। এরই মধ্যে ২ টি প্রসেসর যার মধ্যে একটি কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন এবং অন্যটি মিডিয়াটেকের প্রসেসর। মিড রেঞ্জ বাজেটের স্মার্টফোনগুলোতেই মিডিয়েটেক প্রসেসর বেশি দেখা যায়। এসকল স্মার্টফোন বেজেটের মধ্যে থাকায় অনেকেই ক্রয় করে ফেলেন। আজ এই আর্টিকেলে মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলোর কিছু সমস্যা সম্পর্কে আপনাদের অবগত করাবো। এই প্রব্লেম গুলো আপনার স্মার্টফোন এক্সপেরিয়েন্স কে একদমই নষ্ট করে দেয়। তবে এর আগেই আমরা জেনে নিবো স্মার্টফোনে প্রসে,সর এর আসল কাজ কী?

প্রসেসর কী?

প্রসেসর হলো যেটা আপনার যাবতীয় সকল কমান্ডকে পার্ফর্ম করে থাকে। অর্থাৎ আপনি মোবাইলে যা যা কমান্ড করেন তা সব প্রসেসর করে থাকে। যেমন বিলিয়ন ক্যালকুলেশন চোখের পলকের চেয়েও দ্রুত গতিতে করে দেয়। ইমেজ প্রসেসিং, ভিডিও প্রসেসিং, অ্যাপ্লিকেশন ওপেন ইত্যাদি সকল কিছুই প্রসেসর দ্বারা চালানো সম্ভব হয়। 

একটি প্রসে,সরের মধ্যে ২টি উপাদান থাকেঃ

  1. সিপিইউ 
  2. জিপিইউ

সিপিইউ এর মধ্যে যেসকল কোর থাকে তা আপনার সকল কমান্ডগুলোকে চালায়। একটি প্রসেসর-এ যত বেশি কোর থাকবে সেই প্রসেসরটি তত বেশি ফাস্ট হবে। বর্তমানে বেশির ভাগ কম বাজেটের ফোনগুলোর মধ্যে আমরা অক্টা কোর অর্থাৎ ৮টি কোর পেয়ে থাকি। 

অপরদিকে জিপিইউ আপনার ফোনের রেজুলেশন, গ্রাফিক্স ইত্যাদির জন্য ব্যবহার হয়ে থাকে।

মিডিয়াটেক প্রসেসর

মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলোর বাজারে তেমন একটি সুনাম নেই বললেই চলে। প্রথমতই মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলোয় বেশিরভাগ দেখতে পাওয়া যায় যে ব্যাটারি লাইফ বেশি একটা পাওয়া যায় না। অল্প সময়েই ব্যাটারি লাইফ ড্রেইন হয়। অর্থাৎ অপ্টিমাইজেশন এর বেশি অভাব। মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলোর আরেকটি সমস্যা হলো এই প্রসেসরগুলো অন্যান্য প্র,সেসর থেকে পিছিয়ে। কোনো হেভি টাস্ক পারফোর্ম করার সময় অনেক অল্প সময়ে অনেক বেশি গরম হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রসেসর এর উপর লোড হেভি হয়ে যায়। তাছাড়া এতে ইন-বিল্ট কোনো প্রকার জিপিইউ অথবা কুলিং সিস্টেম থাকে না। তাই আপনি যদি মিডিয়াটেক প্রসেসরের স্মার্টফোন কেনার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্য আপনাকে এটা মাথায় রাখতে হবে।

আরো পড়ুন: সুস্থ থাকতে একজন ব্যক্তি দৈনিক কত ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন

এমন অনেক প্রব্লেম থাকার কারণে বর্তমানে মিডিয়াটেক প্রসে,সর গুলো বাজারে অনেকটাই পিছিয়ে। তবে এতো প্রব্লেম ও পিছিয়ে থাকার পরেও বর্তমানে বাজারে অনেক নামিদামি স্মার্টফোন ব্র‍্যান্ডগুলো মিডিয়াটেক প্রসে,সর এখনো ব্যবহার করে থাকে। যেমনঃ শাওমির নোট ৮ প্রো তে মিডিয়াটেক এর প্রসে,সর ব্যবহার করা হয়েছে।

স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর 

গেমারদের জন্য একটি স্মার্টফোনে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর থাকা অনেক গুরুত্বপুর্ণ। কারণ স্ন্যাপড্রাগন যেকোনো হেভি টাস্ক খুব ভালোভাবেই পার্ফোর্ম করতে সক্ষম। তাছাড়া এতে ইন-বিল্ট কুলিং সিস্টেম থাকায় ফোন তেমন একটা গরমও হয় না। স্ন্যাপ ড্রাগনের প্রসে,সরে আমরা ইন-বিল্ট জিপিইউ, ইমেজ প্রসেসিং ইউনিট, মিডিয়া প্রসেসিং ইউনিট, ডিজিটাল সিগ্নাল প্রসে,সর, রেডিও মডিউল, ওয়াইফাই মডিউল ইত্যাদি পেয়ে থাকি। এতো কিছু সুবিধা ও দ্রুত গতীর পার্ফোরমেন্স থাকায় আজ স্ন্যাপড্রাগনের প্রসেসরগুলো বিশ্ববাজারে এতো নামি-দামি। এক্টু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে বাজারের টপ রেঞ্জ ও গেমিং স্মার্টফোনগুলোতে কিন্তু কখনোই মিডিয়াটেক এর প্র,সেসর ব্যবহার করা হয় না। সেসব ফোনে স্ন্যাপড্রাগন এর বিভিন্ন মডেলের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সুতরাং — গেমিং এর জন্য কোন প্রসে,সর ভালো

আপনি যদি একজন মোবাইল গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আপনক অবশ্য এমন মোবাইল ক্রয় করতে চাইবেন যার মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের গেমসগুলো কোনো ল্যাগ ছাড়া খেলতে পারবেন। সকল ব্র‍্যান্ডের মোবাইল এই সুবিধা দিতে পারে না। এর জন্য আপনাকে মোবাইল ক্রয়ের পূর্বে দেখতে হবে যে আপনার পছন্দের মোবাইলে ভালো ব্র‍্যান্ডের প্রসেসর যুক্ত আছে কি না। আর অবশ্য এই আর্টিকেল পড়ে আপনি জেনে গেছেন যস মিডিয়াটেক প্র,সেসর থেকে স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলো গেমিং ও কঠিন টাস্ক পারফর্ম এর জন্য অনেক ভালো। সুতরাং গেমিং এর জন্য অবশ্য স্ন্যাপড্রাগন প্র,সেসর যুক্ত মোবাইল ভালো।

স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর যুক্ত বেস্ট কিছু মোবাইল ফোন

স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর যুক্ত মোবাইল ফোন গুলো গেমিং এর জন্য বেস্ট হওয়ায় কিছু স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসর যুক্ত বেস্ট কিছু মোবাইল ফোনের লিস্ট দেওয়া হলোঃ

  • পোকো এক্স ৪
  • শাওমি রেডমি নোট ১১ প্রো প্লাস ৫ জি
  • অপো কে ১০
  • রিয়েলমি ৯ প্রো
  • স্যামসাং গ্যালাক্সি এস২২ আল্ট্রা
  • শাওমি রেডমি নোট ১১ টি ৫জি
  • ওয়ান প্লাস ৯ আরটি
  • রিয়েলমি ৯ এসই ৫জি

তালিকায় যুক্ত প্রতিটি মোবাইল ফোনে আপনি স্ন্যাপড্রাগন এর উন্নত মানের প্র,সেসর পাবেন। অর্থাৎ তালিকায় থাকা প্রতিটি ফোনেই আপনি পাবেন অসাধারণ প্রসেসিং ক্ষমতা ও স্পীড। 

পরিশেষে

অনেকেই প্রসেসর সম্পর্কে কিছু না জেনেই মিডিয়াটেক প্রসেসর-এর স্মার্টফোন কিনে থাকেন। পরে স্মার্টফোন এর খারাপ পার্ফোরমেন্স ও অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ায় অনেক আফসোস করে থাকেন। তাই আসা করি এই আর্টিকেলটি পড়ার পর থেকে আপনি স্নার্টফোন কেনার পুর্বে সতর্কতা অবলম্বন করবেন। ভালো প্রসেসর সমৃদ্ধ স্মার্টফোনগুলোর দাম বেশি হলেও পার্ফোরমেন্স ও প্রসেসিং এর দিক থেকে আপনি কখনো নাখোশ হবেন না।

শুধু শুধু ক্যামেরা ও র‍্যামের প্রলোভনের না পরে যেই স্মার্টফোন ক্রয় করবেন তার সকল কম্পোনেন্ট সম্পর্কে ভালো করে জেনে শোনে তারপর আপনার কাছে ভালো লাগলে তবেই ক্রয় করবেন। স্মার্টফোন সম্পর্কে এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে কমেন্ট করে আমাদের জানিয়ে দিন।

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।