প্রযুক্তিবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিব্যবসা-বাণিজ্য

বাংলাদেশের ৫টি টেলিকম কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত!

টেলিকমের পূর্ণ নাম হলো টেলিযোগাযোগ! ভয়েজ, কল, ভিডিয়ো, টেক্সট ইত্যাদি উপায়ে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যালের মাধ্যমে তারবিহীন যোগাযোগই হলো টেলিকমিউনিকেশন!

টেলিকমের পূর্ণ নাম হলো টেলিকমিউনিকেশন বা বাংলাতে টেলিযোগাযোগ! ভয়েজ, কল, ভিডিয়ো, টেক্সট ইত্যাদি উপায়ে ইলেক্ট্রনিক সিগন্যালের মাধ্যমে তারবিহীন যোগাযোগই হলো টেলিকমিউনিকেশন! তো, যেসব কোম্পানি গ্রাহকদের টেলিকমিউনিকেশনে সাহায্য করার জন্য সার্ভিস দিয়ে থাকে, ওগুলোকে বলে টেলিকম কোম্পানি! অনেক সাধারণ মানুষ একে সিম কোম্পানি হিসেবেও চিনে! কারণ বর্তমানে টেলিকমিউনিকেশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হলো মোবাইল ফোন! আর এই মোবাইল ফোন দিয়ে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের জন্য একটা সিম অবশ্যই লাগে! এই সিম ও সিমের সকল সার্ভিস প্রোভাইড করে টেলিকম কোম্পানিগুলো! বাংলাদেশে বর্তমানে ৫টি টেলিকম কোম্পানি বা সিম কোম্পানির কার্যক্রম চালু রয়েছে! কোম্পানিগুলো হলো- টেলিটক, রবি, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল। আজকের পোস্টে আমরা বাংলাদেশের এই ৫টি টেলিকম কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব! চলুন তাহলে শুরু করা যাক!

বাংলাদেশের ৫টি টেলিকম কোম্পানি:

১। গ্রামীণফোন

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি হলো গ্রামীণফোন! গ্রামীণফোনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনূস ও ইকবাল কাদির! ১৯৯৭ সালে নরওয়েভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টেলিনর ও ড. মোহাম্মদ ইউনূসের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম এবং গণফোণ; যৌথভাবে এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিল! গ্রামীণফোনের ৫৫.৮ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা নরওয়েভিত্তিক কোম্পানি টেলিনরের! বাকি মালিকানা গ্রামীণ টেলিকমের! বিটিআরসির তথ্যমতে গ্রামীণফোনের বর্তমানে গ্রাহকসংখ্যা আট কোটির কাছাকাছি হবে! গ্রামীণফোনে প্রায় আড়াই হাজার কর্মী কাজ করে! এ ছাড়া বর্তমানে তাদের বার্ষিক আয় ৩০ বিলিয়ন টাকারও বেশি!

২। রবি:

বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম টেলিকম সেবাসানকারী কোম্পনি হলো রবি। ১৯৯৭ সালে টেলিকম মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা ও এ কে খান এন্ড কোম্পানির মালিকানায় ‘একটেল’ নামে যাত্রা শুরু করেছিল ব্র্যান্ডটি! মজার ব্যাপার, আমাদের পরিবারের প্রথম মোবাইলের [নোকিয়া ৩৩১০ মডেল] প্রথম সিমটি ছিল একটেল সিম! ২০০৮ সালে এ কে খান এন্ড কোম্পানি ব্যবসা বন্ধ করে তাদের শেয়ার জাপানি কোম্পানি ডকোমোকে বিক্রি করে দেয়! এরপর ২০১০ সালে টেলিকম মালয়েশিয়া ‘আজিয়াটা গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে এবং ‘একটেল’ ব্র্যান্ডের নাম বদলে ‘রবি’ করা হয়! এরপর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগের ইতিহাসে একটা বিরল ঘটনা ঘটে! প্রথমবারের মতো ২টি টেলিকম কোম্পানি একীভূত হয়, রবি আজিয়াটা নেটওয়ার্কে! ভারতী এয়াটেলের মালিকানাধীন সিম কোম্পানি ‘এয়ারটেল বাংলাদেশ’ রবি আজিয়াটা নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পর, দুটো মিলে রবি আজিয়াটা গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে দেশের ২য় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর হয়ে ওঠে! বর্তমানে রবির মালিকানা আজিয়াটা গ্রুপের ৬৮.৭% ও ভারতী এয়ারটেলের ৩১.৩%! রবি আজিয়াটা বর্তমানে ‘রবি’ ও ‘এয়ারটেল’ দুটি আলাদা নামে দুটি টেলিকম পরিষেবা একই নেটওয়ার্কের মধ্যে পরিচালনা করছে! যদিও একীভূত হওয়ার শর্ত ছিল ‘এয়ারটেল’ নাম বিলুপ্ত হয়ে, শুধু ‘রবি’ নামে সেবা দান চলবে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত এয়ারটেল নাম বিলুপ্ত হয়নি!

৩। এয়ারটেল

এয়ারটেলের ইতিহাস আমরা অনেকটাই ওপরে জেনে গেছি! এয়ারটেল রবি আজিয়াটা নেটওয়ার্কের আন্ডারে, রবিসহ দেশের ২য় বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি! তবে আমরা আরও পুরোনো ইতিহাসে ফিরে যায়! ২০০৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক টেলিকম কোম্পানি ‘ওয়ারিদ টেলিকম’ নামে ব্যবসা শুরু করেছিল বাংলাদেশে! ২০১০ সালে তারা ভারতী এয়ারটেলের কাছে ৭০% শেয়ার বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়! তখন থেকেই এর নতুন নাম হয় এয়ারটেল বাংলাদেশ! পরে ২০১৩ সালে তারা ভারতী এয়ারটেলের কাছে বাকি ৩০% ও বিক্রি করে দেয়! এরপর ২০১৬ এর কাহিনি তো ওপরেই জেনেছেন! রবি ও এয়ারটেল মিলে এই যৌথ নেটওয়ার্কে বর্তমানে মোট গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটিরও বেশি! আর রবি আজিয়াটার বার্ষিক আয় ২০০ মিলিয়ন টাকার কাছাকাছি!

আরো পড়ুন:মাত্র দু-মিনিট সময় লাগবে গল্পটি পড়তে, মিস করলে জীবনের অনেক কিছু অজানা থাকবে

৪। বাংলালিংক

গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবাদাতা কোম্পানি হলো বাংলালিংক! ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানির মালিক হলো নেদারল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানি ভিওন! সেবা টেলিকম নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৮৮৯ সালে কাজ শুরু করেছিল বাংলাদেশে! কিন্তু ২০০৪ সালের দিকে মাত্র ৪৯০০০ গ্রাহক সমেত তারা ওরাসকম টেলিকম কোম্পানির কাছে সম্পূর্ণ মালিকানা বিক্রি করে দেয়! ওরাসকম এর বর্তমান নাম গ্লোবাল টেলিকম! তো, গ্লোবাল টেলিকম ২০০৫ সালে সেবা টেলিকমের নাম পাল্টে বাংলালিংক নামে ব্যবসা শুরু করে! এদিকে ২০১১ সালে ভিওন ও উইন্ড টেলিকম এস.পি.এ, ব্যবসা একীভূত করার ফলে ভিওন লিমিটেড গ্লোবাল টেলিকমের ৫১.৯% শেয়ার লাভ করে! ফলে বর্তমানে বাংলালিংকের মালিকানা ভিওনের! শুরুর পর থেকেই বাংলালিংক ভালো সার্ভিস দিয়ে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে! একটা মজার ব্যাপার বলে রাখি- আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না, এখন আমরা অন্যজনকে শুধুমাত্র কল করলে কলকারী হিসেবে আমাদের ব্যালেন্স থেকে টাকা কাটে; কিন্তু শুরু দিকে কল রিসিভ করার জন্যেও টাকা কাটা হতো রিসিভকারীর ব্যালেন্স থেকে! ২০০৬ সালে বাংলালিংকই প্রথম টেলিকম কোম্পানি হিসেবে বিনামূল্যে কল রিভিসের সুযোগ করে দেয় গ্রাহকদের! বর্তমানে বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ৩.৫ কোটিরও বেশি!

৫। টেলিটক:

টেলিটক বাংলাদেশের একমাত্র সম্পূর্ণ দেশীয় ও সরকারি মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানি! এর মালিকানা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের হওয়ায় বলা যায় আমরা দেশের প্রত্যেকটা জনগণই টেলিটকের মালিক! কারণ, টেলিটকের রেভেনিউ সরকারি কাজে, অর্থাৎ আমাদেরকে সেবা দেওয়ার জন্যেই ব্যবহৃত হয়! ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করেছিল টেলিটক কোম্পানি! টেলিটকের একটা সুবিধা হলো- সুন্দরবন, সিলেটের পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলসহ অসংখ্য দুর্গম জায়গাতেও টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়! গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে দেশের ৪র্থ বৃহত্তম এই টেলিকম কোম্পানির বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৬০ লাখের কাছাকাছি! রবির পর আমার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা অপারেটর হলো টেলিটক!

প্রিয় পাঠক, এই ছিল- বাংলাদেশের ৫টি টেলিকম কোম্পানি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য! লেখাটি ভালো লাগলে পরিচিতজনদের শেয়ার করুন! আর আপনি কোন সিম ইউজ করেন, আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন!

Back to top button

Opps, You are using ads blocker!

প্রিয় পাঠক, আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন, যার ফলে আমরা রেভেনিউ হারাচ্ছি, দয়া করে অ্যাড ব্লকারটি বন্ধ করুন।